চাকসুর খসড়া ভোটার তালিকায় অসঙ্গতি, শিক্ষকদের নাম-ছাত্র হলে ছাত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:০৮ পিএম
চাকসুর খসড়া ভোটার তালিকায় অসঙ্গতি, শিক্ষকদের নাম-ছাত্র হলে ছাত্রী

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) নির্বাচনের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পর শুরু হয়েছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত এ তালিকায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর ও ইতিহাস বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নুরুল হামিদ এবং একই বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রন্টু দাশের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ চাকসু নীতিমালা অনুযায়ী কোনো শিক্ষক ভোটার হওয়ার যোগ্য নন।

শুধু তাই নয়, ছেলেদের জন্য নির্ধারিত শহীদ ফরহাদ হোসেন হলের ভোটার তালিকায় পাওয়া গেছে পাঁচ ছাত্রীর নাম। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী। বিষয়টি সামনে আসার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

চাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. মনির উদ্দিন কালবেলাকে বলেন, “ভুল থাকতে পারে ভেবেই খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। যে নামগুলোতে অসঙ্গতি রয়েছে, তা যাচাই করে সংশোধন করা হবে। শিক্ষার্থীরা আপত্তি জানালে সেসব বিষয়ও বিবেচনা করা হবে।” নির্বাচন কমিশনের ঘোষণামতে, ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আপত্তি গ্রহণ করা হবে এবং ১১ সেপ্টেম্বর চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।

খসড়া তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫ হাজার ৮৬৬ জন। এর মধ্যে নারী ভোটার রয়েছেন ১০ হাজার ৮৪১ জন এবং পুরুষ ভোটার ১৫ হাজার ২৫ জন। সর্বাধিক ভোটার রয়েছে অর্থনীতি বিভাগে, ৮৯৪ জন। আর সবচেয়ে কম ভোটার রয়েছে জামাল নজরুল ইসলাম গণিত ও ভৌত বিজ্ঞান গবেষণাকেন্দ্রে, যেখানে মাত্র ৩৩ জন ভোটার অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

বিভিন্ন অনুষদে ভোটার সংখ্যার হিসাব অনুযায়ী সমাজবিজ্ঞান অনুষদে অর্থনীতি বিভাগে ৮৯৪ জন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে ৮৯৩ জন, সমাজতত্ত্ব বিভাগে ৭০৪ জন, লোকপ্রশাসন বিভাগে ৮৪৪ জন, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগে ৪৪৪ জন, যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে ৩৭৪ জন, নৃবিজ্ঞান বিভাগে ৪৮০ জন, ক্রিমিনোলজি অ্যান্ড পুলিশ সায়েন্স বিভাগে ২২৬ জন এবং উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগে ১৮৭ জন শিক্ষার্থী ভোটার হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন।

ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদে হিসাববিজ্ঞান বিভাগে ৭০৫ জন, ফাইন্যান্স বিভাগে ৮৬১ জন, ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগে ৬২২ জন, মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগে ৫৮০ জন, ব্যবস্থাপনা বিভাগে ৬৯৬ জন এবং মার্কেটিং বিভাগে ৫৮৭ জন ভোটার রয়েছেন।

এ ছাড়া জীববিজ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রকৌশল, আইন, শিক্ষা, কলা ও মানববিদ্যা এবং মেরিন সায়েন্স অনুষদ মিলিয়ে প্রায় সব বিভাগেই শতাধিক থেকে কয়েকশ’ শিক্ষার্থী ভোটার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন।

চাকসু নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হলেও ভোটার তালিকার অসঙ্গতি নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, প্রাথমিক খসড়ায় এ ধরনের ভুল থাকতে পারে, তবে চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে সব ভুল সংশোধন করা হবে।

নির্বাচন কমিশনের সময়সূচি অনুযায়ী, ১৪ সেপ্টেম্বর মনোনয়নপত্র বিতরণ শুরু হবে। মনোনয়নপত্র জমা নেওয়া হবে ১৫ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। যাচাই-বাছাইয়ের পর ২১ সেপ্টেম্বর প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা প্রকাশ হবে। প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ২৩ সেপ্টেম্বর এবং ২৫ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হবে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা। ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ১২ অক্টোবর (রোববার)।

উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালে প্রথম চাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলেও এতদিনে মাত্র ছয়বার এ নির্বাচন হয়েছে। সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি। দীর্ঘ বিরতির পর আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ ও প্রত্যাশা বেড়ে গেছে 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে