বাংলাদেশের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তা এড়াতে আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে দ্বন্দ্ব নয়, বরং গণতন্ত্রের পথে দ্রুত প্রত্যাবর্তনই সবচেয়ে জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘পোস্ট জুলাই পলিটিক্যাল থটস: হুইচ ডিরেকশন বাংলাদেশ ইজ ওয়াকিং’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি বলেন, “আমার কথামতো দেশ চলতে হবে—এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিক্রি করার মতো আন্দোলনকেও বিক্রি করা যাবে না। এটি জনগণের কৃতিত্ব।”
আমীর খসরু বলেন, বিএনপি জুলাই অভ্যুত্থানের কোনো কৃতিত্ব দাবি করছে না, বরং এটি বাংলাদেশের মানুষের গণজাগরণের ফসল। মুক্তিযোদ্ধারা যেমন যুদ্ধ শেষে নিজ নিজ জীবনে ফিরে গিয়েছিলেন, তেমনি কোনো আন্দোলনকে সারাজীবন পুঁজি করে রাখা উচিত নয়। তাঁর ভাষায়, “একদল মুক্তিযুদ্ধ বিক্রি করেছে, আরেকদল আবার চব্বিশ দিয়ে আখের গোছাতে চায়।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, আন্দোলনের কৃতিত্ব নিয়ে যদি রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে দেশের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়বে। রাজনীতিতে গণতন্ত্রায়ন হলেও যদি অর্থনীতি মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত থাকে, তাহলে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়।
সেমিনারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, দেশের রাজনৈতিক সংকট সমাধান না হওয়ায় নতুন বিনিয়োগ থমকে আছে। সম্প্রতি বিনিয়োগ সম্মেলন হলেও তাতে কেবল পুরোনো বিনিয়োগকারীরাই অংশ নিয়েছেন। জাপানি ডেলিগেশনসহ বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখন নির্বাচনের পর পরিস্থিতি অনুকূল হলে উদ্যোগ নেবেন। তাঁর মতে, আগামী সরকার যদি ছয় মাস, এক বছর বা আঠারো মাসের মধ্যে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী সাড়া দিতে না পারে, তাহলে জনগণ ধৈর্য হারাবে।
তিনি বলেন, সরকার ও জনগণের মধ্যে এখন কোনো সেতুবন্ধন নেই। এর প্রভাব পড়ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপরও। তাই দেশের ভবিষ্যতের জন্য দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের ধারায় ফিরে আসা ছাড়া বিকল্প নেই।
সেমিনারে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে উদ্বোধনী বক্তব্য দেন স্কুল অব লিডারশিপের প্রতিষ্ঠাতা গোলাম রাব্বানী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন লন্ডনের নর্থামব্রিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলিয়ার হোসেন। আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন ও জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন স্কুল অব লিডারশিপের যুগ্ম সম্পাদক গোলাম কাদের চৌধুরী।