ব্যাপক হট্টোগোল, হাতাহাতি ও ব্যালট ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনায় পিরোজপুর সদর উপজেলা বিএনপির মঙ্গলবারের কাউন্সিল পন্ড হয়ে যায়। ওই দিন রাতে পিরোজপুর জেলা শহরের শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে।
১০ বছর পর মঙ্গলবার ওই কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো। হাতাহাতির ঘটনায় দুয়েক নেতাসহ কয়েকজন আহত হয়েছে বলে জানা গেলেও এব্যাপারে কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলেননি। এ ঘটনায় শহরে উত্তেজনা বিরাজ করছে। কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে শহরে পুলিশ মোতায়েনসহ চলছে পুলিশী টহল।
ভোট গণনার সময় সেখানে উপস্থিত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মী জানান, মঙ্গলবার বিকেলে সুষ্ঠভাবে সদর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের ৪৯৭ জন কাউন্সিলরের মধ্যে ৪৮২ জনের ভোট গ্রহন শেষে ভোট গণনা এক পর্যায়ে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে হঠাৎ সেখানে উপস্থিত কিছু ব্যক্তি হট্টগোল শুরু করে এবং ভোট দেওয়া ব্যালটগুলো ছিনতাই করে নিয়ে যায়। এতে বন্ধ হয়ে যায় নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা।
পিরোজপুর জেলা বিএনপিসহ সব স্তরের কাউন্সিল সম্পন্ন করতে কেন্দ্রীয় বিএনপির বন ও পরিবেশ বিষয়ক সহসম্পাদক কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপুকে কেন্দ্র থেকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। টিপু এ প্রতিনিধিকে জানান, মঙ্গলবার সকাল ১১ টায় জেলা শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে সদর উপজেলা বিএনপির সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হয়। সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকসহ ৫টি পদে বিকেল থেকে ভোট গ্রহন শুরু হয়ে রাত সাড়ে ৮ টার দিকে ভোট গ্রহন সম্পন্ন হয়। সাংগঠনিক সম্পাদক পদের ভোট গননা শেষে হঠাৎ করে একটি হট্টোগোল শুরু হয়। কে বা কারা ওই ঘটনা ঘটায় তা তিনি বলতে পারবেন না বলে জানান। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির একাধিক নেতা ব্যালট ছিনিয়ে নেওয়ার কথা বললেও টিপু বলেছেন ব্যালট বাক্স ছিনিয়ে নেওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি। তবে তিনি জানান, কাউন্সিল চলাকালে এরকম একটি ঘটনা ঘটায় তা তিনি কেন্দ্রকে অবগত করেছেন। নির্বাচনের ফলাফল বিষয়ে টিপু জানান, দলীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা করে এ ব্যাপারে পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান সভাপতি প্রার্থী মহিউদ্দিন মল্লিক নাসির এবং সাধারন সম্পাদক প্রার্থী মোঃ কামরুজ্জামান চান জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলুর উপর দোষ চাপিয়ে বলেন, আমাদের দু’জনের নিশ্চিত বিজয় আঁচ করতে পেরে প্রতিপক্ষ প্রার্থীরা ওই ঘটনা ঘটিয়েছে।
এব্যাপারে জেলা বিএনপির আহবায়ক অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন জানান, ভোট গননার শেষ পর্যায়ে যে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটেছে তা দুঃখজনক। তিনি বলেন, কারা কোন পরিকল্পনায় এ ঘটনা ঘটিয়েছে তা কেন্দ্রীয় বিএনপি তদন্ত করে দেখবে এবং ঘটনার সাথে যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী ওয়াহিদুজ্জামান লাভলুর সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তার উপর দোষ চাপানোটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত। সম্মেলন স্থলে যখন অনাকাঙ্খিত ঘটনাটি ঘটে তখন আমি ও আহবায়ক আলমগীর হোসেন সেখানে ছিলাম না। তিনি বলেন, উপজেলা বিএনপির সভাপতি প্রার্থী মহিউদ্দিন মল্লিক নাসিরকে উদ্দেশ্য করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মনিরুল ইসলাম মনির এর সমর্থকরা রাজাকার বলে শ্লোগান দিয়ে সম্মেলন স্থলে ঢুকে পড়ে। এতে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাক্কাধাক্কি হয়। এ সময়ে ব্যালট ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে বলে শুনতে পেয়েছি। তিনি বলেন, দলের মধ্যে ছদ্মবেশী জামায়াত-শিবিরের নেতা কর্মীরা আমার বিরুদ্ধে এ সব প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, মহিউদ্দিন মল্লিক নাসির ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব গাজী লাভলু ২০১৪ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক ছিলেন।
এ বিষয়ে পিরোজপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার পিরোজপুর সদর উপজেলা বিএনপির সম্মেলন ছিলো। গন্ডোগোলের কারনে কাউন্সিল পন্ড হয়ে যায়। তবে কোনো রকম কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। সব কিছু পুলিশের নিয়ন্ত্রনে আছে। শহরে পুলিশ মোতায়েন ও টহল রয়েছে।