ওষুধের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিন

এফএনএস | প্রকাশ: ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:৪৭ পিএম
ওষুধের উচ্চমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নিন

ওষুধের উচ্চমূল্যের কারণে রোগী ও তাদের স্বজনদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়তে হয়। নানা কারণে বাংলাদেশে ওষুধের দাম বাড়ে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে ওষুধ কোম্পানিগুলোর মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ বা এমআর প্রথা। এই এমআররা ডাক্তারদের বিভিন্ন কোম্পানির নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ওষুধ লিখতে প্রলুব্ধ করেন। আর সে জন্য ডাক্তারদের ব্যক্তিগত গাড়িসহ দামি উপহার, বিদেশভ্রমণ, নগদ অর্থসহ নানা সুযোগ-সুবিধা দিয়ে থাকেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমান জানান, শুধু প্রচারেই ওষুধ কোম্পানিগুলো শতকোটি টাকা খরচ করে। ফলে ওষুধের খরচ বেড়ে যায়, আর সেই বর্ধিত খরচ পরিশোধে বাধ্য হয় রোগীরা। বিক্রেতারাও সুযোগ বুঝে ওষুধের দাম বাড়িয়ে দেন। বিভিন্ন সময়ে দেখা গেছে, বাজারে ওষুধ নাই হয়ে যায়। আবার বেশি টাকা দিলে একই বিক্রেতা একই ওষুধ এনে দিতে পারেন। এসব অনৈতিক প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশ থেকে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিদায় নিচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ বৈশ্বিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে বাংলাদেশের ২৪ শতাংশ মানুষ বিপর্যয়ের মুখোমুখি। শুধু চিকিৎসা করাতে গিয়ে প্রতিবছর ৬২ লাখের বেশি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে চলে যাচ্ছে। ১৬ শতাংশ খানা (এক পাকে খাবার খায় এবং একসঙ্গে বাস করে এমন পরিবার) বিনা চিকিৎসায় থাকছে। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টস’-এর হিসাব অনুযায়ী, ২০২০ সালে দেশের মোট স্বাস্থ্য ব্যয়ের প্রায় ৬৯ শতাংশ ব্যক্তির পকেট থেকে খরচ করতে হয়। আর এই স্বাস্থ্য ব্যয়ের ৬৪.৬ শতাংশই খরচ হয় ওষুধ কেনা বাবদ, টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৩৬ হাজার কোটি। ২০২১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশে ডায়াবেটিক রোগীর সংখ্যা এক কোটি ৩০ লাখের মতো। এর মধ্যে মাত্র ৫৯ লাখ রোগী চিকিৎসা নেয়। বাকি ৭১ লাখ রোগী রয়ে যায় চিকিৎসার বাইরে, মূলত অর্থাভাবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কমিশন বাণিজ্য দূর করতে ব্র্যান্ড নামের পরিবর্তে জেনেরিক নাম লেখা বাধ্যতামূলক করতে হবে। সব ওষুধের মূল্য নির্ধারণ একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় আনতে হবে। প্রয়োজনীয় ওষুধের আমদানি সহজ করতে হবে। এ ছাড়া অনৈতিক মুনাফাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।