আঁচল ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক জরিপের তথ্য আমাদের উচ্চশিক্ষার বাস্তবতাকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করে। জরিপে উঠে এসেছে যে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ৪১ দশমিক ৯ শতাংশ শিক্ষার্থী বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। আরও উদ্বেগজনক বিষয় হলো-তাদের ৯০ শতাংশের মানসিক স্বাস্থ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। শিক্ষা যে সমতা ও স্বাধীনতার পরিবেশে বিকশিত হওয়ার কথা, সেখানে বৈষম্য যদি শিক্ষার্থীর প্রাত্যহিক অভিজ্ঞতা হয়ে দাঁড়ায়, তবে তা কেবল ব্যক্তিগত নয়, জাতীয় অগ্রগতির জন্যও হুমকি। বৈষম্যের ধরনগুলো বিচিত্র। লিঙ্গ, ধর্ম, অর্থনৈতিক অবস্থা, শারীরিক অবয়ব কিংবা রাজনৈতিক মতপার্থক্য-সবকিছুই শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। সবচেয়ে আশঙ্কাজনক তথ্য হলো, শিক্ষক ও সহপাঠীরাই এ ধরনের আচরণের প্রধান উৎস। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক উদাসীনতা। ফলে শিক্ষার্থীরা কেবল পড়াশোনার চাপই নয়, মানসিক অস্থিরতা, বিষণ্নতা, উদ্বেগ ও একাকিত্বের মতো সমস্যার সঙ্গে লড়াই করছে। যেখানে ৫১ শতাংশ শিক্ষার্থী পড়াশোনায় মনোযোগ ধরে রাখতে পারছেন না, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। অথচ মানসিক স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উদাসীনতা, তথ্য-অভাব, সামাজিক ট্যাবু এবং আর্থিক সীমাবদ্ধতা সমস্যাকে আরও গভীর করছে। জরিপে দেখা গেছে, মাত্র ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী মানসিক স্বাস্থ্যসেবার শরণাপন্ন হয়েছেন। এই প্রেক্ষাপটে আঁচল ফাউন্ডেশনের সাত দফা প্রস্তাব বাস্তবভিত্তিক ও সময়োপযোগী। নিয়মিত মানসিক স্বাস্থ্য স্ক্রিনিং, মেন্টরিং, অভিযোগ ব্যবস্থার স্বচ্ছতা, নারী শিক্ষার্থীর জন্য আলাদা সেল, ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং এবং প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা-এসব উদ্যোগ আর বিলম্ব করার সুযোগ নেই। শিক্ষাঙ্গনে বৈষম্য কেবল শিক্ষার্থীর মানসিক সুস্থতাকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে না; এটি সামাজিক আস্থার ভিত্তিকেও দুর্বল করছে। বিশ্ববিদ্যালয় যদি সমতা, মর্যাদা ও স্বাধীন চিন্তার জায়গা হারায়, তবে তা থেকে সৃজনশীল ও মানবিক নেতৃত্বের জন্ম হবে কীভাবে? এখনই সময়-বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, শিক্ষক সমাজ, শিক্ষার্থীদের অভিভাবক ও নীতি-নির্ধারকদের একসাথে এগিয়ে আসার। বৈষম্যমুক্ত ও মানসিক স্বাস্থ্যবান শিক্ষাঙ্গন গড়ে তোলা কেবল শিক্ষার্থীদের কল্যাণের প্রশ্ন নয়; এটি জাতির ভবিষ্যতের প্রশ্ন।