স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত কয়রার মানুষ, নিরসনে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

এফএনএস (মোঃ রিয়াছাদ আলী; কয়রা, খুলনা) : | প্রকাশ: ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:৩১ পিএম
স্বাস্থ্যসেবা বঞ্চিত কয়রার মানুষ, নিরসনে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি প্রদান

খুলনা জেলা শহর থেকে ১,শ কিলোমিটার  দূরবর্তী দুর্গম উপকূলীয় উপজেলা কয়রার মানুষের স্বাস্থ্য সেবার সংকট নিরসনে সাত দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) বেলা ১১ টায় কয়রা উপজেলা পরিষদের সামনে বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো'র কয়রা উপজেলা শাখার উদ্যোগে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

 মানববন্ধন অনুষ্ঠানে  দাবিগুলোর সাথে একত্বতা পোষণ করে স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ ও এলাকার বিশিষ্টজন মানববন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। মানববন্ধন শেষে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কাছে পেশ করার জন্য কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল্লাহ আল বাকী'র কাছে একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়।

বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা সভাপতি সাংবাদিক তরিকুল ইসলামের সভাপতিত্বে এতে বক্তৃতা করেন, কয়রা সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট সমাজসেবক এইচএম শাহাবুদ্দিন, মহারাজপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও কয়রা প্রেসক্লাবের সভাপতি মাস্টার সদউদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরো'র কয়রা উপজেলা শাখার নির্বাহী সদস্য প্রভাষক নুরুজ্জামান, উপকূল ও সুন্দরবন সংরক্ষণ আন্দোলনের আহ্বায়ক অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন, ডেলিভারির সময় মৃত্যুবরণ করা এক বোনের ভাই রাসেল। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আয়োজক সংগঠনটির সহ-সভাপতি ও কয়রা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, জিএম মোনায়েম বিল্লাহ, নির্বাহী সদস্য মাওলানা সোহরাব হোসেন, সুন্দরবন চ্যারিটির চেয়ারম্যান আবুল হাসান, বিলিভার'স এইডের পরিচালক মোঃ মেজবাহ উদ্দিন, সাংবাদিক নজরুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, ফরহাদ হোসেন, গণধিকার পরিষদের কয়রা উপজেলা সভাপতি ইয়াসিন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক নেতা মোশাররফ হোসেন রাতুল, গালিব, ইমদাদুল, কয়রা ব্লাড ব্যাংকের সাধারণ সম্পাদক আলিম, আকিবুর প্রমুখ।

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চরম চিকিৎসক সংকট, অবকাঠামোগত দুরবস্থা ও প্রয়োজনীয় সেবা না থাকায় মানুষকে ন্যূনতম চিকিৎসার জন্যও জেলা শহরে ছুটতে হয়। দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ সিজারিয়ানসহ সব ধরনের অপারেশন বন্ধ রয়েছে। নেই কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা। দারিদ্রতার কারণে খরচ বহন করতে না পারায় বিনা চিকিৎসায় রোগ জটিল হচ্ছে। ৫০ শয্যার হাসপাতাল কার্যত ১৯ শয্যার ভবনে সীমাবদ্ধ। ৩১ শয্যার ভবন পরিত্যক্ত, আর ২০২২ সালে বরাদ্দ পাওয়া নতুন ভবনের কাজও স্থবির হয়ে পড়েছে। বক্তারা আরো জানান, উপজেলায় কোনো নারী চিকিৎসক নেই। শিশু বিশেষজ্ঞ ছাড়া অত্যন্ত প্রয়োজনীয় গাইনী, সার্জারি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞসহ কোন জুনিয়র কনসালটেন্ট পদের বিপরীতে চিকিৎসক নেই। মন্ত্রণালয় থেকে কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পদায়ন করা হলেও আবাসিক ভবনের সুব্যবস্থা না থাকার অযুহাতে কয়রায় অবস্থান করেন না। খুলনা শহর থেকে মাঝেমধ্যে দু’একদিন এসে নামমাত্র সেবা দিয়ে পুরো মাসের বেতনভোগ করেন। এছাড়া সিভিল সার্জন/ বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালককে ম্যানেজ করে প্রেষণে অন্যত্র সংযুক্ত হন। কয়েকজন মেডিকেল অফিসার বিপুল জনগোষ্ঠীর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন। সিজারিয়ান অপারেশন বন্ধ থাকায় চরম বিপাকে পড়ছেন প্রসূতি নারীরা। জরুরী মুহূর্তে চরম ঝুঁকি নিয়ে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় জেলা শহরে। ফলে প্রসূতি মা ও শিশুদের মৃত্যু ঝুঁকি আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এছাড়া উপজেলার সাত ইউনিয়নের মধ্যস্থান কয়রা সদরে অবস্থিত একমাত্র উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি জনবল ও অবকাঠামো সংকটে বন্ধ রয়েছে। কয়রার দুঃখী জনমানুষকে মৌলিক স্বাস্থ্যসেবার আওতায় আনতে দ্রুত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের সদয় হস্তক্ষেপ কামনা করেন নাগরিক নেতারা। 

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে