ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তাপ দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে অস্থিরতা বাড়ার পাশাপাশি শিক্ষাঙ্গনও অশান্ত হয়ে উঠেছে। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীকে মোকাবিলা করার ক্ষেত্রে সংলাপ ও আলোচনার পরিবর্তে হামলা, ভীতি প্রদর্শন, শারীরিক আঘাত এবং কখনো কখনো হত্যাকাণ্ড পর্যন্ত ঘটেছে। এরই ধারাবাহিকতায় ছাত্র-যুবসমাজের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে ওঠা নুরুল হক নুরের ওপর বারবার হামলা শুধুমাত্র ব্যক্তিগত আক্রমণ নয়, বরং রাজনীতির জন্য একটি অশনি সংকেত। এই ঘটনা আমাদের সামনে এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছে-বাংলাদেশের রাজনীতি কি আবারও সহিংস অস্থিরতার দিকে ধাবিত হচ্ছে? নুরুল হক নুর বহুবার বিভিন্ন সংগঠনের হাতে আক্রান্ত হয়েছেন। প্রতিটি হামলার মধ্যে কিছু অভিন্ন বৈশিষ্ট্য তার ভিন্ন রাজনৈতিক অবস্থান সহ্য করতে না পেরে প্রতিপক্ষরা হামলার পথ বেছে নেয়। মূলধারার দলগুলো মনে করে নুরের মতো নেতা জনপ্রিয় হলে তাদের রাজনৈতিক আধিপত্য হুমকির মুখে পড়বে। হামলার মাধ্যমে তরুণদের জানিয়ে দেওয়া হয়-বিকল্প রাজনীতি করার সাহস দেখালে এভাবেই দমন করা হবে। এখানে সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, হামলার পরও ন্যায়বিচার নিশ্চিত হয় না। বরং হামলাকারীরা পার পেয়ে যায়, যা ভবিষ্যতের জন্য আরও ভয়াবহ বার্তা বহন করে। গণতন্ত্রের প্রধান শক্তি হলো সংলাপ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং সহনশীলতা। কিন্তু বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভিন্নমত দমন করতে হামলা, গ্রেপ্তার, গুম বা হয়রানি করা সাধারণ ঘটনা।এর ফলে তরুণরা রাজনীতিতে আগ্রহ হারায়। এছাড়াও জাপাকে ঘিরে নতুন সমীকরণ, জুলাই সনদ নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং বিরোধী জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনার অচলাবস্থা সব মিলিয়ে রাজনীতির দাবা বোর্ডে নতুন হিসাব-নিকাশ চলছে। জাতীয় পার্টির অফিসে আগুন দেওয়া হয়েছে। মব সন্ত্রাসও উদ্বেগের কারণ হয়েছে। শুধু ঢাকায় নয়, ঢাকার বাইরেও উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। খুনাখুনির ঘটনাও ঘটছে। এ ধরনের সহিংসতা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিপন্ন করে তুলছে এবং নির্বাচনী প্রস্তুতির পরিবেশকে আরো সংকটময় করে দিচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকার যখন ঘোষণা দিয়েছে যে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হবে, তখন এমন ঘটনা সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। রাজনৈতিক দলগুলোর উগ্রপন্থা ও সহিংসতা কেবল জনগণের আস্থা নষ্ট করবে, গণতন্ত্রকে দুর্বল করবে। প্রতিটি রাজনৈতিক শক্তির উচিত জনগণের কাছে দায়বদ্ধ থাকা এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ খোঁজা। জনগণের প্রত্যাশা একটি অংশগ্রহণমূলক, স্বচ্ছ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন। সহিংসতা ও দমননীতির মাধ্যমে এই লক্ষ্য পূরণ সম্ভব নয়।