বাল্যবিবাহ রোধে সমন্বিত প্রয়াস দরকার

এফএনএস
| আপডেট: ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:০০ পিএম | প্রকাশ: ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:০০ পিএম
বাল্যবিবাহ রোধে সমন্বিত প্রয়াস দরকার

বর্তমানে বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যাগুলোর মধ্যে বাল্যবিবাহ অন্যতম একটি। এক সময় বাল্যবিবাহ বাংলাদেশের মহামারি আকার ধারণ করেছিল। এখনো যে বাল্যবিবাহ হয় না তা নয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের জন্য এই শব্দটা বিভীষিকাময় এক কালো অধ্যায়। অনেকে বলেন এটি একটি সামাজিক অভিশাপ; কিন্তু সংশ্লিষ্ট অভিভাবকরা এটি সামাজিক বাস্তবতা বলে অভিহিত করে থাকেন। বাল্যবিবাহের যে সমস্ত কারণ রয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো দরিদ্রতা, অশিক্ষা, সচেতনতার অভাব, প্রচলিত প্রথা ও কুসংস্কার, সামাজিক অস্থিরতা, যৌন নিপীড়ন, মেয়েশিশুর প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, নিরাপত্তার অভাব, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি, যৌতুক প্রথা এবং বাল্যবিবাহ রোধসংক্রান্ত আইনের যথাযথ প্রয়োগ না হওয়া। বাল্যবিবাহের কারণে অপরিণত বয়সে সন্তান ধারণ, মাতৃমৃত্যুর হার বৃদ্ধি, স্বাস্থ্যহানি, তালাক, পতিতাবৃত্তি, অপরিপক্ব সন্তান প্রসবসহ নানাবিধ জটিলতার শিকার হচ্ছে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, আমাদের দেশে বেশির ভাগ মেয়ের বিয়ে হয় ১২ থেকে ১৮ বয়সের মধ্যে। বিয়ের ১৩ মাসের মধ্যেই ৬৫% মেয়েসন্তান ধারণ করে। গ্রামের মেয়েদের বেশিরভাগই বিয়ের এক বছরের মধ্যে সন্তান জন্ম দেয়। বাল্যবিবাহের প্রবণতা ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। বাল্যবিবাহের ফলে মেয়েদের অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ করতে হয়। এমনকি গর্ভধারণ থেকে বাচ্চা প্রসব করতেই অনেকের মৃত্যু হয়। প্রতিদিনের খবরের কাগজে চোখ বোলালে এরকম হাজারো ঘটনা চোখে পড়ে। এই বাল্যবিবাহ মেয়েদের জন্য কি ক্ষতি করে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। বাল্যবিয়ের শিকার ভুক্তভোগী ছেলে মেয়ে বুঝে হোক বা না বুঝে হোক, সে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বাস্তবতার নিরিখে এটা মেনে নিতে বাধ্য হয়। পরবর্তীসময়ে নেতিবাচক ফলাফল সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণাই থাকে না। আইনে ন্যূনতম বিয়ের বয়স মেয়েদের জন্য ১৮ এবং ছেলেদের জন্য ২১ বছরই অপরিবর্তিত থাকলেও ২০১৭ সালে অপ্রাপ্তবয়স্ক বিয়ের জন্য কঠোর শাস্তির বিধান নিয়ে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন সংশোধন করা হয়েছে। তবে জনসচেতনতার অভাব এবং মেয়েদের জন্য যথার্থ বিকল্প শিক্ষা ও কর্মসংস্থান বা উপার্জনের সুযোগ না থাকার কারণে এ আইন এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত প্রভাব ফেলতে পারেনি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীন তথ্য অধিদপ্তর, গণযোগাযোগ অধিদপ্তর, চলচ্চিত্র ও প্রকাশনা অধিদপ্তর, বাংলাদেশ টেলিভিশন এবং বাংলাদেশ বেতার বাল্যবিয়ে বন্ধে নিয়মিত জনসচেতনতামূলক প্রচার কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সমাজের সবার সক্রিয় ভূমিকার মাধ্যমেই দেশের এবং পরিবারের স্বার্থে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে হবে। জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার স্বপ্নপূরণের কর্মসূচির অংশ হোক নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য দূর করা। এ জন্য প্রয়োজন বাল্যবিবাহ বন্ধে একতা ও অঙ্গীকার।