রাজবাড়ীতে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা: নিহত ১, আহত অর্ধশতাধিক

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:০৩ পিএম
রাজবাড়ীতে নুরাল পাগলার দরবারে হামলা: নিহত ১, আহত অর্ধশতাধিক

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দে নুরুল হক মোল্লা ওরফে নুরাল পাগলার দরবার শরিফে ভয়াবহ সহিংস হামলার ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত চলা দফায় দফায় সংঘর্ষে রাসেল মোল্লা (২৮) নামে একজন নিহত হয়েছেন এবং পুলিশ সদস্যসহ অন্তত অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হয়েছেন। নিহত রাসেল মোল্লা দরবারের খাদেম ছিলেন বলে জানা গেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, জুমার নামাজের পর বেলা তিনটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত একদল উত্তেজিত লোক দরবারে হামলা চালায়। তারা দরবারের ভেতরে প্রবেশ করে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং লাশ অবমাননার মতো চরম ঘটনা ঘটায়। শরিয়ত-বিরোধীভাবে দাফন করা হয়েছে—এমন অভিযোগ তুলে নুরাল পাগলার কবর খুঁড়ে মরদেহ বের করে পদ্মার মোড়ে মহাসড়কের ওপর এনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। এ সময় এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সংঘর্ষ চলাকালে ভক্তদের সঙ্গে হামলাকারীদের ব্যাপক ইটপাটকেল নিক্ষেপ হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গেলে পুলিশের অন্তত ছয় সদস্য আহত হন। হামলাকারীরা পুলিশের দুটি গাড়ি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) গাড়িও ভাঙচুর করে। খবর পেয়ে দ্রুত পুলিশ, র‍্যাব ও সেনাসদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

গোয়ালন্দ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা শরিফ ইসলাম জানান, গুরুতর আহত অবস্থায় রাসেল মোল্লাকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আতিয়ার রহমানও তাঁর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন।

নিহত রাসেল মোল্লা গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা ঝুটু মিস্ত্রি পাড়ার বাসিন্দা আজাদ মোল্লার ছেলে।

স্থানীয় সূত্র জানায়, বহু বছর আগে গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডে নিজ বাড়িতে দরবার শরিফ প্রতিষ্ঠা করেন নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলা। তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে গত ২৩ আগস্ট মারা যান। ওই দিন রাতে ভক্তরা আস্তানার ভেতরে কয়েক ফুট উঁচুতে বিশেষ কায়দায় তাঁর দাফন সম্পন্ন করেন। এরপর থেকেই কবর সমতল করার দাবি তোলে স্থানীয় আলেম সমাজ ও ইমান-আকিদা রক্ষা কমিটি। কয়েক দফা বৈঠক হলেও সমঝোতা না হওয়ায় শুক্রবারের মধ্যে দাবি না মানলে বিক্ষোভ ও কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় কমিটি।

ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী শুক্রবার আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে একদল লোক দরবারে হামলা চালায়। হামলায় ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের পাশাপাশি লাশ অবমাননার মতো অমানবিক ঘটনা ঘটে।

অন্তর্বর্তী সরকার এ ঘটনায় গভীর নিন্দা জানিয়েছে। শুক্রবার রাতে এক বিবৃতিতে সরকার জানায়, নুরাল পাগলার কবর অবমাননা ও মরদেহে আগুন দেওয়ার মতো অমানবিক কাজ দেশের মূল্যবোধ, আইন এবং মানবতার বিরুদ্ধে আঘাত। বিবৃতিতে বলা হয়, এ ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে এবং উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।

সরকার সকল নাগরিককে সহিংসতা ও ঘৃণা প্রত্যাখ্যান করে ন্যায়বিচার ও মানবতার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে