পাবনার সুজানগরের বিশাল বিস্তীর্ণ ঐতিহ্যবাহী গাজনার বিলের পাড় হতে পারে সম্ভাবনাময় দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র। বিশেষ করে প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বিলকে ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে উঠার সোনালী স্বপ্ন পর্যটকদের মনেপ্রাণে দোল দেয়। বিলপাড়ের উলাট গ্রামের সমাজসেবক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আব্দুল হালিম সাজ্জাদ জানান, অর্ধ শত সবুজ শ্যামল গ্রাম বেষ্টিত প্রায় ৬হাজার হেক্টর জমি নিয়ে গড়ে উঠেছে বিশাল বিস্তৃত গাজনার বিল। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে গাজনার বিল বর্ষার নতুন পানিতে থৈ থৈ করে। আর বিলে এ পানি থাকে পৌষ মাস পর্যন্ত। বর্ষার শুরু থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত দীর্ঘ এ সময় গাজনার বিল সত্যই অপরূপ সৌন্দর্য ধারণ করে। সেকারণে এ সময় স্থানীয় পর্যটকদের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে হাজার হাজার নারী-পুরুষ পর্যটক ছুটে আসেন গাজনার বিল ভ্রমণে। ভ্রমণ পিপাসু ওইসব বেশিরভাগ পর্যটক গাজনার বিলে নৌ-ভ্রমণ করে থাকেন। পর্যটকদের নৌ-ভ্রমণের জন্য বিলের খয়রান ব্রিজ পয়েন্টে, চরবোয়ালিয়া পয়েন্টে, বাদাই ব্রিজ পয়েন্টে এবং বোনকোলা ব্রিজ পয়েন্টে বাণিজ্যিকভাবে রাখা হয় ইঞ্জিন চালিত নৌকা। বিশেষ করে বিলের খয়রান ব্রিজ পয়েন্ট পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হওয়ায় এখানে শত শত পর্যটকবাহী নৌকার পাশাপাশি পর্যটকদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করতে রাখা হয় ছোট-বড় অগণিত বাইচ’র নৌকা। স্থানীয় পর্যটকরা ওই বাইচ’র নৌকায়ও বিল ভ্রমণ করে থাকেন। বিলপাড়ের খয়রান গ্রামের হোসেন আলী খান বলেন চলতি বর্ষা মৌসুমে প্রতিদিন কমবেশি পর্যটককে গাজনার বিলে নৌ-ভ্রমণ করতে দেখা যায়। তবে শুক্র এবং শনিবার হাজার হাজার পর্যটকদের নৌ-ভ্রমণে গাজনার বিল মুখরিত হয়ে উঠে। এদিন হাজার হাজার পর্যটকদের পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী বর্ণিল সাজে সেজে গাজনার বিলে নৌ-ভ্রমণ করেন। পর্যটকরা সকাল ১০টা থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত বিলের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত ঘুরে ঘুরে নৌ-ভ্রমণ করে থাকেন। বিলপাড়ের মানিকহাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই খান বলেন এলাকায় তেমন কোন বিনোদন কেন্দ্র নেই। সেকারণে সুজানগরসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার হাজার, হাজার পর্যটকরা পরিবারপরিজন নিয়ে গাজনার বিলে নৌ-ভ্রমণ করার পাশাপাশি বনভোজন করে আনন্দ উৎসব করেন। বিলে নৌ-ভ্রমণে আসা উপজেলার মানিকহাট গ্রামের আবুল কাশেম মোল্লা বলেন বিলটি ঘিরে পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ জন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিলে সারা বছর পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করা এবং বিলের ২/৪টি পয়েন্টে পরিকল্পিতভাবে পিকনিক স্পট ও আবাসন সুবিধা গড়ে তোলা। একই গ্রামের কামরুজ্জামান জুয়েল বলেন বর্ষা মৌসুমে গাজনার বিলে নৌ-ভ্রমণের আনন্দ যেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের আনন্দকেও ম্লান করে দেয়। কিন্তু এই আনন্দকে ধরে রাখতে প্রয়োজন সরকারি অর্থায়নে বিল খনন করে সারা বছর পানি প্রবাহ চালু রাখা। সেই সঙ্গে পর্যটকদের সুবিধার্থে বিলপাড়ে পর্যটক বেঞ্চ নির্মাণসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা গড়ে তুলতে হবে। সুজানগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীর রাশেদুজ্জামান রাশেদ বলেন গাজনার বিলকে নিয়ে সরকারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা রয়েছে। তবে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সময় লাগবে।