রাতে নিজ ঘরে ঘুমিয়ে ছিলেন। রাত ১২টার দিকে ঘুমের মধ্যে অনুভব করেন বুকের বাম পাশে কিছুতে কামড় দিয়েছে। প্রচন্ড ব্যথায় জেগে উঠেন। এরপর সাপে কামড়ের মত পাশাপাশি দুইটা ক্ষত চিহ্ন দেখতে পান। পরিবারের সবাইকে জানানোর পর পাশের গ্রামে ওঝার কাছে নিয়ে যান। ওঝা ঝাড়ফুক করে বিষ নামিয়ে দেন। আরো নিশ্চিত হওয়ার জন্য তার পরিবার যশোর সদর হাসপাতালে নেন। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যায় গেল বিষ নেই। অদৃশ্য কোন প্রাণীর কামড়ের সিকার এই ব্যক্তি স্থানীয় একটি মসজিদে ইমাম। ঘটনাটি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ১ নম্বর রাখালগাছি ইউনিয়নের মোল্লাকোয়া গ্রামের।
এ ঘটনার ঠিক ৫ দিন পর ওই ইমামের স্ত্রী ও তার ১০ বছরের ছেলে মেহেরাব অদৃশ্য প্রাণীর কামড়ের সিকার হয়। দুজনকেই পাশের গ্রাম বহিরগাছি এক ওঝার কাছে নিয়ে ঝাড়ফুক করেন। এরপর তারা সুস্থ্য হয়ে উঠেন।
একইভাবে গত এক মাসে প্রায় শতাধিক নারী পুরুষ ও শিশু অদৃশ্য এ প্রাণীর কামড়ের সিকার হয়ে ওঝা ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর ঘটনার পর থেকেই গ্রামের চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। রাত হলে আতঙ্ক বেড়ে যায়। এ পর্যন্ত যারা কামড়ের সিকার হয়েছেন বেশিরভাই রাতের বেলায়। যদিও স্থানীয়দের মধ্যে জ্বীন সাপে এমন কামড় দিচ্ছে বলে ছড়িয়ে পড়েছে।গ্রামবাসি বলছেন, গত ৪ আগষ্ট সোমবার দিবাগত রাতে ওই গ্রামে সাপের কামড়ে হাসিবুল হাসান জনি (৪০) নামে এক ব্যক্তি সাপের কামড়ে মারা যান। রাতে নিজ ঘরে ঘুমের মধ্যে বিষধর সাপ তার কানে কামড় দেয়। এসময় টের পেয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রাম সুবিতপুরে এক ওঝার কাছে নিয়ে ঝাড়ফুক করে। পরে আরো অসুস্থ্য হয়ে পড়লে ভোরে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। এসময় ডাক্তার তার এন্টিভেনম দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর ২৫০ শয্যা হাসপতালে পাঠিয়ে দেন। যশোর নেওয়ার পথে সকাল ৭টার দিকে মারা যান। মৃত জনি উপজেলা মোল্লাকুয়া গ্রামের মৃত ইউছুপ আলীর ছেলে ও ঝিনাইদহ আদালতে মুহুরির কাজ করতেন।
তার মৃত্যুর পর থেকে গ্রামের একের পর এক নারী পুরুষ ও শিশু অদৃশ্য সাপের কামড়ে সিকার হচ্ছেন। যদিও গ্রামবাসি বলছেন এটা জ্বিনের কাজ। ওই গ্রামের বাসিন্দা সাবেক ইউপি মেম্বার আনিচুর রহমান ঘটনার সত্যসিকার করে জানান, আমি নিজে ১০ এর অধিক রোগীকে যশোর সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছি। তবে সেখানে ডাক্তাররা পরীক্ষা করে কোন সাপের বিষ পাননি। তবে গ্রামের মানুষের মধ্যে জ্বীন সাপ আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে শিশু ও নারীরা বেশি ভিত হয়ে পড়েছে। গ্রামের মানুষ জোট হয়ে একাধিক কবিরাজ এনে গ্রাম বন্ধ করলেও কোন কাজ হচ্ছে না।
কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ জামে মসজিদের খতিব আলহাজ্ব রুহুল আমিন সৌরভ বলেন, জ্বীনেরা সাপের রূপ ধারণ করতে পারে। তবে আল কুরআনে সরাসরি "জ্বীন সাপ" বলে কিছু বলা হয়নি। তবে জ্বীনেরা বিভিন্ন রূপ নিতে পারে বলে উল্লেখ আছে। এটা আতংকের কিছু নেই। নবীজি বলেছেন, ঘরে কোন সাপ দেখলে সতর্ক কর, যদি চলে না যায় তাহলে মেরে ফেলো। তবে জ্বীন সাপের কারণে কারো মৃত্যু হয় না। এমন কোন ঘটনা দেখা দিলে কিছু মাসনুন দোয়া আমল এর থেকে পরিত্রানের উপায়।