নিকলী উপজেলা সদর হাসপাতালের পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সাথে রোগীর হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে ৭ আগষ্ট দুপুরের দিকে। সেবা নিতে এসে উল্টো লাঞ্ছিতের পাশাপাশি মামলা দিয়েও কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগী ও তার পরিবারের অভিযোগ।
কিশোরগঞ্জের নিকলী উপজেলা সদর হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সজিব ঘোষের কাছে নিকলী উপজেলা সদরের ৪নং ওয়ার্ডের বানিয়া হাটি গ্রামের মরহুম সুরুজ আলীর বড় ছেলে রফিকুল ইসলাম চিকিৎসার পাশাপাশি ডাক্তারের কাছে ডায়বেটিসের ঔষধের আবদার করলে ডাক্তার তাকে পুনরায় পরিক্ষা ছাড়া ঔষধ দিতে আপত্তি তোলেন। সেবা প্রত্যাশী রফিকুল ইসলাম অর্থনৈতিক সংকট দেখিয়ে এই সময়ে কাকুতি মিনতি করেন কিছু সরকারি ঔষধের জন্যে। ডাঃ দিতে আপত্তি জানালে
এক পর্যায়ে কার জন্যে হাসপাতালের এই সব ঔষধ রাখা হয়, এমন প্রশ্নে ডাক্তার ক্ষেপে গিয়ে তুচ্ছ তাচ্ছিল্যে তুইথাক্কারি শব্দ ব্যবহার করেন। এমনকি তার প্রেসক্রিপশনও ছিড়ে ফেলেন। এতে সেবা নিতে আসা রফিক রফিক অনেকটা ক্ষোভে অভিমানে গালমন্দের সুরে “হিন্দু লোক বলে আজ এমন অমানবিক কাজটা করতে পারলেন বলে সামনাসামনি উল্লেখ করেন”এমন জবাব দিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্টা চালাতেই ডাঃ সজিব ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে কয়েকটি থাপ্পড় মারেন। এ সময় থাপ্পড়ের প্রতিবাদে কান্নারত কন্ঠে উচ্চস্বরে লোকজনকে জানানোর চেষ্টা করাতেই পুনরায় ডাঃ সজিবের নির্দেশে তাকে অন্তত আরও ৬/৭ জন অফিস স্টাফ মিলে মারধর করে। এক পর্যায়ে তাকে গেট বন্ধ করে আটকে রাখা হয়। ডাক্তারের নির্দেশে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এলোপাথাড়ি ফ্লোরে ফেলে রাখা হয় ফাঁসানোর লক্ষ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্থানীয় বেশ কয়েকজন লোকসহ গণমাধ্যমকর্মীও সেখানে হাজির হয়। রফিকের কান্নার আওয়াজও তারা শুনতে পান। তখন সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেননি ডাঃ সজিব। এমন সময়ে ডাঃ সজিবের ফোনের খবরে পুলিশ হাসপাতালে আসে। ঐ সময়েও সাংবাদিকদের ঢ়ুকতে নিষেধ করা হয়। এমন অভিযোগ সাংবাদিকদের পক্ষ থেকেও। এমনকি নাইম নামের এক স্থানীয় সাংবাদিক “রফিককে আটক রাখার পাশাপাশি ঢ়ুকতে না দেওয়ার লাইভে এসে বাস্তবতা তুলে ধরেন”
ডাঃ সজিব ঘোষের মুঠোফোনে নিকলী থানার ওসি সেখানে পুলিশ পাঠান। পুলিশ এসে সেবা প্রত্যাশী রফিককে থানা হাজাতে নিয়ে আটক করে রাখে। বন্দী অবস্থায় রফিকের সাথে এক পর্যায়ে ৭সেপ্টেম্বর দুপুরের থানায় কথা হলে কান্নারত কণ্ঠে তিনি নিদারুণ এই অমানবিক নিষ্ঠুর আচরণের বাস্তবতার কথা তুলে ধরেন।
এ সময়ে হাসপাতাল সংলগ্ন একাধিক ডিসপেনসারির মালিকসহ সেবা নিতে আসা রোগীরা আফসোসে বলেন, ডাক্তারের কাছে থেকে এমনটি রোগীদের কখনো কাম্য নয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কিছু সচেতন লোকের সাথে কথা হলে তারা স্পষ্টভাবেই উল্লেখ করেন, ডাঃ সজিব ঘোষ সব সময়ই উপর মহলের নেতাকর্মীদের তাঁবেদারি করে এসেছেন। নিকলীর পার্শ্ববর্তী কটিয়াদী উপজেলার মানিক খালীতে তার গ্রামের বাড়ি আর কিশোরগঞ্জ সদরে বাসা বলে দৌড়ঝাঁপে এখনো দাপটে। তবে এখন কৌশল পাল্টে তাঁবেদারি করে আ'লীগের বিপরীতে অবস্থানকারীদের। সরকারি ঔষধ নিয়মবহির্ভূতভাবে নেতাকর্মীদের বাসায় পাঠিয়ে দেয়া থেকে শুরু করে বাসায় গিয়ে চিকিৎসা সেবা দেওয়ারও প্রমাণ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রোগী দেখার চেয়ে অধিক গুরুত্ব দেন রিপ্রেজেন্টেটিভদের। প্রায়ই ডাঃ সজিবের কক্ষের সামনে রিপ্রেজেন্টেটিভদের দীর্ঘ লাইনের দৃশ্য মিলে। হাসপাতালে তার কাছে অসহায়দের কাঙ্খিত সেবা মিলেনি। অজুহাত দেখান লোকবল সংকটের পাশাপাশি অপর্যাপ্ত সরঞ্জামাদির। এই হাসপাতালকে তিনি ভিন্ন ইনকামের পন্থায়ও পরিণত করে নিয়ছেন।
সজিব ঘোষ ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে ৩৩ তম স্বাস্থ্য বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে প্রথমে নিজ উপজেলা কটিয়াদীতে যোগদান করেন। সবশেষ ২২, ফেব্রুয়ারিতে নিকলী সদর হাসপাতালে যোগদান করেন। একাধিক সূত্রে জানা গেছে জেলা সদরের তমালতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের
রথখলাতে যৌথ মালিকানাধীন তার একটি সুরক্ষা ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে নিকলী সদর হাসপাতালের এমসিডি এনসিডি কণার থেকে বিজিনিং কার্ড ধরিয়ে দিয়ে কৌশলে তার ডায়গনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করিয়ে আসতে বাধ্য করেন। জনসংখ্যার তুলনায় হাওরের পর্যটন এলাকার এই হাসপাতালটি অনেকাংশে পিছিয়ে থাকার কারণ হিসেবে তদারকির যথেষ্ট ঘাটতির কথাও স্থানীয়দের মুখে মুখে দীর্ঘদিন থেকে।
অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সাংবাদিক নাইম ক্ষোভের ভাষায় উল্লেখ করেন, এটা সম্পূর্ণ অমানবিক, ডাক্তারের কাছে মাতাল কিবা পাগলসহ সকল ধরণের রোগীরা সেবা নেওয়ার অধিকার রাখে। এমনটি কামনা করে না। তাছাড়া সাংবাদিকদের প্রবেশের সুযোগ বন্ধ করে সরকারী হাসপাতালে সেবা প্রত্যাশীরষকে মারধরের ঘটনাসহ মামলা দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়া সম্পূর্ণ অনৈতিক। সিসি ক্যামেরা থাকলেই সব সত্য উঠে আসতো নিঃসন্দেহে। হাসপাতালে সিসি ক্যামেরা না থাকায় সেখানে অনেক ধরণের অপরাধ হয়ে থাকে। যার জন্যে দায়ী কর্তৃপক্ষ। প্রতিনিয়তিই শোনা যায় হাসপাতাল থেকে রোগীও দর্শনার্থীদের পকেট মারের ঘটনা।
ডাঃ সজিব ঘোষ এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তিনি কখনো ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না, সুরক্ষা ডায়াগনস্টিকে তার নয়, তিনি নিজে প্রহার করেননি, সেবা প্রত্যাশী ভাংচুর করেছে নাকি এসব সাজানো? সকল সিসি ক্যামেরা অচল, তবে যার বিরুদ্ধে ভাংচুর ও মারামারির অভিযোগ উঠেছে এসবের কোনো ভিডিও ফুটেজ আছে কি না? এমন জবাবে তারা তাদের সেবায় ব্যস্ত থাকার অজুহাতে এসব ধারণ সম্ভব হয়ে উঠেনি বলেও উল্লেখ করেন।
নিকলী থানার অফিসার ইনচার্জ কাজী আরিফ উদ্দিনের কাছে এসবের বাস্তবতা জানতে চাইলে তিনি সরকারি মালামাল ভাংচুর ও ডাঃ সজিব ঘোষকে মারধর করা হয়েছে মর্মে ৭ সেপ্টেম্বর বিকাল ৫ টার দিকে মামলা হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন। এছাড়াও সকাল ৮ টির দিকে রফিককে কিশোরগঞ্জ জেলখানাতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান।