থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও ধনকুবের থাকসিন সিনাওয়াত্রাকে এক বছরের কারাদণ্ড ভোগের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। আদালতের মতে, পূর্বে কারাগারের বদলে হাসপাতালের ভিআইপি কক্ষে অবস্থান ছিল বেআইনি এবং ইচ্ছাকৃতভাবে কারাভোগ এড়ানোর কৌশল।
মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) ব্যাংককের আদালতে রায় ঘোষণার সময় ৭৬ বছর বয়সী থাকসিন নিজেই উপস্থিত ছিলেন। রয়টার্স জানিয়েছে, রায় ঘোষণা শেষে আদালত প্রাঙ্গণেই তাকে হেফাজতে নেওয়া হয়। পাঁচ সদস্যের বিচারক প্যানেল জানান, তার শারীরিক সমস্যা থাকা সত্ত্বেও চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে রাখা জরুরি ছিল না, বরং তিনি সুবিধা নিয়ে ছয় মাস বিলাসবহুল ভিআইপি কক্ষে কাটিয়েছেন।
থাকসিন ২০০৬ সালে সেনা অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দীর্ঘ ১৫ বছর দুবাইয়ে স্বেচ্ছা নির্বাসনে ছিলেন। ২০২৩ সালে দেশে ফেরার পর স্বার্থের সংঘাত ও ক্ষমতার অপব্যবহারের দায়ে তাকে আট বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। পরে রাজকীয় ক্ষমায় তা কমে এক বছরে নেমে আসে। তবে জেলে মাত্র কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে হৃদরোগ ও বুকে ব্যথার অজুহাতে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেই ছয় মাসের অবস্থান এখন আদালত বেআইনি ঘোষণা করেছে।
এই রায় সিনাওয়াত্রা পরিবারের জন্য বড় রাজনৈতিক ধাক্কা। মাত্র ১১ দিন আগে সাংবিধানিক আদালতের রায়ে থাকসিনের কন্যা ও রাজনৈতিক উত্তরসূরি পায়েতংতার্ন সিনাওয়াত্রা প্রধানমন্ত্রী পদ হারিয়েছেন। থাই রাজনীতিতে বিগত দুই দশকে সিনাওয়াত্রা পরিবারের প্রভাব বিস্তার থাকলেও সেনাবাহিনী ও আদালতের হস্তক্ষেপে বারবার তারা ক্ষমতা হারিয়েছে।
বিবিসি জানিয়েছে, রায়ের দিন মেয়ে পায়েতংতার্ন বাবার সঙ্গে আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বাবাকে নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন হলেও পরিবার মানসিকভাবে দৃঢ় রয়েছে এবং বিরোধী দল হিসেবে পিউ থাই পার্টিকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
থাকসিন আদালতে আসার আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানান, শারীরিকভাবে তিনি বন্দি থাকলেও মানসিকভাবে সবসময় থাইল্যান্ড ও জনগণের সঙ্গেই আছেন।
এই মামলাটি থাইল্যান্ডে আলোচিত হয়েছে "চৌদ্দ তলা মামলা" নামে, কারণ পুলিশ জেনারেল হাসপাতালের ওই তলাতেই তিনি সাজাভোগের সময় কাটান। সমালোচকরা বলছেন, এটি প্রমাণ করেছে ধনী ও প্রভাবশালীরা আইনকে পাশ কাটিয়ে বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন।