শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে হাইল হাওরে অবস্থিত বাইক্কা বিল। বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জলাভূমি এবং পাখির অভয়ারণ্য। ২০০৩ সালের ১ জুলাই ভূমি মন্ত্রণালয় এটিকে সরকারি সংরক্ষিত মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করে। পরবর্তীতে এটি পাখিদের অভয়ারণ্য হিসেবেও পরিচিতি লাভ করে।
বাইক্কা বিলের আয়তন প্রায় ১০০ হেক্টর। এখানে ৮০ প্রজাতির মাছ এবং ১৮ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছ রয়েছে। পাখির প্রজাতি প্রায় ১৬০-এর বেশি। শীতকালে পরিযায়ী পাখির আগমনে বিল মুখরিত হয়ে ওঠে। উল্লেখযোগ্য পাখির মধ্যে রয়েছে পানকৌড়ি কানিবক, ধলাবক, ধূপনি বক, রাঙা বক, মাছরাঙ্গা, গোবক ও শঙ্খচিল। ২০১১ সালে এখানে দেখা গেছে খধৎমব-নরষষবফ জববফ ডধৎনষবৎ যা বিশ্বের সবচেয়ে কম পরিচিত পাখি। ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে চবৎবমৎরহব ঋধষপড়হ, বিশ্বের দ্রুততম পাখি (ঘণ্টায় ৩২০ কিলোমিটার পর্যন্ত ডুবতে সক্ষম), প্রথমবারের মতো পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। ২০১০ সালে রেকর্ড করা সর্বাধিক পাখি ৪০ প্রজাতির ১২,২৫০টি জলচর পাখির সন্ধান মিলে। ২০২৫ সালের জানুয়ারির শুমারিতে মোট ৩৮ প্রজাতির ৭,৮৭০টি পাখি গণনা করা হয়।
হাওর পাড়ের মানুষ জীবিকা নির্বাহ করে মাছ ধরা, কৃষিকাজ এবং নৌপরিবহনসহ জলজ উদ্ভিদ বিক্রির মাধ্যমে। বিক্রি করা হয় পদ্মটুনা, মাখনা, শাপলা-শালুক ইত্যাদি। পর্যটন খাতও এখন স্থানীয়দের আয়ের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। পর্যটকদের জন্য রয়েছে দ্বিতল অবজারভেশন টাওয়ার।
বাইক্কা বিল কেবল একটি জলাশয় নয়, এটি বাংলাদেশের জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও পর্যটন আকর্ষণের কেন্দ্র। আন্তর্জাতিক গুরুত্বপূর্ণ পাখি পর্যবেক্ষণ ও গবেষণার জন্য এটি একটি অনন্য স্থান। এখানে প্রতিবছর জানুয়ারিতে ওয়াটার বার্ড সেনসাস এ আওতায় পাখিশুমারি অনুষ্ঠিত হয় যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সংরক্ষন করা হয়। এটি গুরুত্বপূর্ন পাখি এলাকা। যথাযথ সংরক্ষণ ও সচেতনতার মাধ্যমে এই বিল আগামী প্রজন্মের জন্য বাংলাদেশের এক অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ হয়ে থাকবে।