বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে আগ্রহ হারাচ্ছে বিদেশী শিক্ষার্থীরা

বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় ভর্তিতে আগ্রহ হারাচ্ছে বিদেশী শিক্ষার্থীরা। ফলে টানা তিন বছর ধরে সরকারি-বেসরকারি দুই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়েই কমছে বিদেশি শিক্ষার্থীর সংখ্যা। দেশের ২১টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশি শিক্ষার্থী পড়েন। সেগুলোতে ২০২৩ সালে ৬৩৩ জন বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন। তার আগের বছর ছিল ৬৭০ জন।  অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে বিদেশি শিক্ষার্থী কমেছে ৩৭ জন। আর ২০২১ সালে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ৬৭৭ জন। এমন পরিস্থিতির পেছনে সার্বিকভাবে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার মান ও পরিবেশ ভূমিকা রাখছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, একসময় বেশ ভালো সংখ্যক বিদেশি শিক্ষার্থী বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে ভর্তি হতেন। কিন্তু সামপ্রতিক বছরগুলোতে সেই প্রবণতায় ভাটা পড়েছে। বর্তমানে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি বিদেশী শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে। সেখানে শিক্ষার্থী সংখ্যা ১১২ জন। ময়মনসিংহে অবস্থিত বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন ৯১ জন, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮৭ জন আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৬ জন বিদেশী শিক্ষার্থী পড়েন। কিন্তু এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর থাকা ও ব্যবস্থাপনাগত বড় সমস্যা রয়েছে। তাছাড়া ভালো গ্রন্থাগারসহ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য যে পরিপূর্ণ ব্যবস্থা থাকা দরকার, ওই পরিবেশ দেশেল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নেই। ফলে দিন দিন দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কমছে বিদেশী শিক্ষাথীর সংখ্যা।

সূত্র জানায়, দেশে বিগত ২০২৩ সালে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩টির কার্যক্রম ছিল আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছিল ১১৪টি। সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে (অধিভুক্ত কলেজ ও মাদ্রাসাসহ) মোট শিক্ষার্থী ৪৮ লাখ ২১ হাজারের বেশি। দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে এখন ৩২টিতে বিদেশি শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করছেন। ২০২১ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী ছিলেন ১ হাজার ৬০৪ জন, ২০২২ সালে ১ হাজার ২৮৭ জন, আর ২০২৩ সালে এসে তা নেমেছে ৮২৬ জনে। এক বছরের ব্যবধানে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৬১ জন বিদেশি শিক্ষার্থী কমেছে। 

সূত্র আরো জানায়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়টি সীমান্ত কাছাকাছি হওয়ায় যাতায়াত সুবিধার কারণে ভারত, নেপাল ও ভুটানের শিক্ষার্থীরা সহজেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। তাছাড়া নাইজেরিয়া, সোমালিয়াসহ কয়েকটি দেশ থেকেও কিছু শিক্ষার্থী আসে। ওসব দেশ থেকে অনেক বছর ধরেই কিছু শিক্ষার্থী আসছে এবং তা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

এদিকে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যাওয়া প্রসঙ্গে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান জানান, দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে দেশি শিক্ষার্থীদের জন্যই পর্যাপ্ত উপযোগী ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়নি। ভালো থাকার সুবিধা, ভালো গ্রন্থাগারসহ একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিপূর্ণ ব্যবস্থা থাকা দরকার। কিন্তু দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ওই পরিবেশ নেই। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নিজস্ব শিক্ষার্থীদের জন্যই ওই আয়োজন করতে পারেনি, সেখানে বিদেশি শিক্ষার্থী তো দূরের পথ।