তানোরে

স্ত্রীর বেড়াকলে এসআই কারাগারে : কষ্টে জীবন কাটছে মা-বাবার

মো: ইমরান হোসাইন; তানোর, রাজশাহী | প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:২২ পিএম
স্ত্রীর বেড়াকলে এসআই কারাগারে : কষ্টে জীবন কাটছে মা-বাবার
বাবা-মা অত্যান্ত অসহায় গরীব। কিন্তু লেখাপড়ায় সর্ব সেরা। তিনি মেধাবী বলে বিনা টাকায় ২০১৯ সালের শেষের দিকে পুলিশের এসআই পদে চাকুরি হয় তার। ছোট থেকেই অত্যন্ত সৎ, নম্র, ভদ্র ও ধর্ম ভিরু ভালো মনের মানুষ। এজন্য পাশের মহল্লার ধনাঢ্য পরিবারের এক কলেজ প্রভাষক মুগ্ধ হয়ে তার মেয়ের সাথে বিবাহ দেন। এরপর সংসার জীবনে তিনি সৎ উপার্জনে স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে চান। কিন্তু তার স্ত্রী চাই, স্বামী পুলিশে চাকুরি করে সেই সুবাদে অবৈধ ভাবে টাকা কামিয়ে বাড়ি-গাড়ি করে বিলাস বহুল জীবন-যাপন করতে। তাতে সম্মতি না দেয়ায় স্ত্রীর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়ে কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন এসআই। কান্না ভরা কণ্ঠে এমন বেদনা দায়ক কথাগুলো বলেন, রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর সদরের সাদিপুর মহল্লার বাসিন্দা আব্দুল লতিফের পুত্র সোহরাব আলী ছাড়াও ওই এলাকার বিপুল সংখ্যক প্রতিবেশি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিগত ২০২২ সালের ২৯ জুলাই তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার সাদিপুর মহল্লার বাসিন্দা রফিকুল খলিফার পুত্র এসআই কাউসার আলীর (২৯) সাথে বিয়ে হয় একই এলাকার ময়েনপুর মহল্লার বাসিন্দা ও মুন্ডুমালা ফজর আলী কলেজের প্রভাষক রবিউল ইসলামের কন্যা তানিসা ইসলাম তৃপ্তির (২১)। বিয়েতে নগদ ১২ হাজার টাকা দেনমোহরনা দেন এসআই কাউসার। তাদের দাম্পত্য জীবনে একটি কন্যা সন্তান আসে। যার বয়স প্রায় ১০ মাস। নাম মেহেজাবিন আয়াত। কিন্তু বিবাহের প্রায় ৪ মাস ভালোভাবে ঘর-সংসার চলে। এরপরে এসআই কাউসারকে পিতার সংসার থেকে আলাদা হতে তৃপ্তি ও তার প্রভাষক পিতার পক্ষে থেকে বিভিন্ন ভাবে চাপ বাড়তে থাকে। এঅবস্থায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা রাজশাহী হতে বিগত ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই বাড়ি আসেন এসআই কাউসার। পরদিন স্ত্রী তৃপ্তি বিবাহ বার্ষিকী তার পিতার বাড়িতে পালনের জন্য নিয়ে যান। কিন্তু সেখানে বিবাহ বার্ষিকী অনুষ্ঠানে এতো টাকা খরচ করতে অসম্মতিতে জানান এসআই কাউসার। এতে উভয়ের মধ্যে জগড়া বাঁধে। ফলে রাতেই নিজ বাড়িতে চলে আসেন তিনি। পরদিন ২৯ জুলাই সকালে কাউসারের পিতার বাড়িতে তৃপ্তি এসে ঝগড়া বিবাদ সৃষ্টি করে। বিষয়টি নিয়ে তৃপ্তির বাবাকে জানানো হলে রাজশাহীস্থ পিতার ভাড়া বাসায় নেয়া হয় তৃপ্তিকে। সেখানে এসআই কাউসার গেলে তার সাথে মারমুখি আচরণ, আপমান অপদস্থ্য ও লাঞ্ছিত করে তাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে অপমান সহ্য করতে না পেরে ক্ষুব্ধ অভিমানে ৩০ জুলাই স্ত্রীকে এক তরফা তালাক দেন এসআই কাউসার। এক আইনজীবি বলেন, স্ত্রীকে তালাক দেওয়ায় যৌতুক ও নির্যাতন মামলা করে তৃপ্তি (২১)। মামলায় তৃপ্তির স্বামী এসআই কাউসার আলী (২৯), তার পিতা রফিকুল খলিফা (৫০) ও মাতা তহমিনাকে (৪০) আসামী করা হয়। মামলাটি আমলে নিয়ে রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনাল আদালত-১ তদন্তের জন্য জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেন। পরে তদন্ত শেষে পুলিশের এসআই কাউসার আলীকে অভিযুক্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। তবে, এসআইয়ের বাবা-মাকে তদন্ত প্রতিবেদনে আসামী থেকে বাদ দেয়া হয়। কিন্তু ওই মামলায় সম্প্রতি ৩ সেপ্টেম্বর এসআই কাউসার হাজিরা দিতে গেলে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বর্তমানে রাজশাহী কারাগারে বন্দি রয়েছেন তিনি। এসআই কাউসার কারাগারে যাবার আগ মুহুর্ত বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদা রাজশাহীতে কর্মরত ছিলেন। এব্যাপারে কাউসারের পিতা রফিকুল খলিফা বলেন, তালাকের খবর পেয়ে পিতার পরিবারের কু-পরামর্শে ব্লেড দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে সামান্য ক্ষত চিহ্ন তৈরি করে তৃপ্তি। পরে রামেক হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেখিয়ে ২০২৪ সালের ২১ আগস্ট রাজশাহীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১ আদালতে যৌতুক ও নির্যাতন মামলা করে। বিজ্ঞ আদালত যার মামলা নম্বর-১০৩/২০২৪ (তানোর)। বর্তমানে নতুন করে ২৪/২৫ নম্বর হিসেবে মামলটি রুপান্তরিত হয়েছে। ওই মামলায় ৩ সেপ্টেম্বর বুধবার আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে জামিন আবেদন করেন। কিন্তু তার ছেলে এসআই কাউসারের জামিন না মঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। তবে, চলতি বছরের আগামী ২০ নভেম্বর চার্জ শুনানী অনুষ্ঠিত হবে। ওইদিন কাউসারের জামিন হতে পাতে বলে আশাবদী তিনি। ঘটনাস্থলে সরজমিনে গিয়ে তথ্যানুুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর সদরের সাদিপুর মহল্লায় পাঁকা রাস্তার পাশে এসআই কাউসারের পিতার মাটির বাড়ি। মরিচা পড়া টিনের সাউনি ওই বাড়ি ছাড়া তার আর কোন সম্পত্তি নেই। বাড়িতে রয়েছে দুটি ঘর আর বারান্দা। বাড়ির মধ্যে অঙ্গিনায় টিন ও বাঁশের বেড়া খেজুরের ডাল দিয়ে রান্নাঘর। বাড়ির দক্ষিণে প্রাচীর না থাকায় দেখা যাচ্ছে জঙ্গল। ফলে শেয়াল কুকুর হাঁস-মুরগি আনায়াসে ধরে খাই প্রায় সময়। এসআই কাউসারের পিতা রফিকুল খলিফা ব্যাংকে এক লক্ষ টাকা লোন করে পাশে তৈরি করেছেন ইটের একটি ঘর। রোদ বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে ওই ঘরের উপরে দরি বেধে বিছিয়ে রাখা হয়েছে টিন। সেখানে রয়েছে চকি। ওই চকির উপরে বেছানো আছে খেজুর পাটি। এসআই কাউসার বাড়ি আসলে থাকেন ওই কুড়ে ঘরে। কিন্তু তার স্ত্রী সেখানে থাকেন না। চলে যান পাশের গ্রামে পিতার দ্বিতল আলিশান বাড়ি ময়েনপুর মহল্লায়। পুলিশের এসআইয়ের পরিবার হয়েও স্ত্রীর ভয়ে এমন কষ্টে জীবন-যাপন করেন তারা। কিন্তু মামলার এজাহারে বাদী তৃপ্তি দাবি করেছেন, সাড়ে ৩ লক্ষ টাকা যৌতুক দিয়ে বিয়ে হয় তার। পরে ১৫ লক্ষ টাকা যৌতুক প্রাপ্তির প্রত্যাশায় তাকে নির্যাতন করা হয়। ফলে শান্তির আশায় তার পিতা ১১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা তার স্বামীকে ঋণ দেয়। এরপরও ৭ লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবিতে মারপিট করা হয় তাকে। অন্যায় ভাবে তাকে তালাক দেওয়ায় তিনি মামলা করেছেন। তবে, এনিয়ে তৃপ্তির বাবা প্রভাষক রবিউল ইসলামের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে তিনি বলেন, মামলাটি সত্য না মিথ্যা আদালতে তা প্রমাণ করা হবে বলে সরাসরি দেখা করার আহবান জানিয়ে মোবাইল সংযোগ বিছিন্ন করেন তিনি। এবিষয়ে তৃপ্তির সঙ্গে একাধিকবার যোগযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে, এব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা বিজ্ঞ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ই/তা
আপনার জেলার সংবাদ পড়তে