নেপালে অস্থিরতার মাঝে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন সুশীলা কার্কি

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:১৩ এএম
নেপালে অস্থিরতার মাঝে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন সুশীলা কার্কি
নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কার্কি

প্রবল ছাত্র-যুব বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলির পদত্যাগের পর নেপালে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি। এর মধ্য দিয়ে তিনি নেপালের ইতিহাসে প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে নতুন অধ্যায়ের সূচনা করলেন।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সময় রাত ৯টায় প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেলের সরকারি বাসভবন ‘শীতল নিবাসে’ সুশীলা কার্কি শপথ নেন। প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপি ও দেশটির দৈনিক কাঠমান্ডু পোস্ট এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

নেপালের জেন-জি প্রজন্মের আন্দোলনের ফলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দাবি উঠে। তাদের প্রস্তাবেই কার্কির নাম বিবেচনায় আসে। অবশেষে প্রেসিডেন্ট, সেনাপ্রধান অশোক রাজ সিগদেল ও আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের আলোচনার পর কার্কিকে অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়ে সবার মধ্যে ঐকমত্য গড়ে ওঠে।

সুশীলা কার্কি ২০১৬ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত নেপালের প্রধান বিচারপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তিনি ছিলেন দেশটির প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি। বিচার বিভাগে দায়িত্ব পালনের সময় দুর্নীতিবিরোধী কঠোর অবস্থানের জন্য তিনি বিশেষভাবে পরিচিত। এ কারণেই তরুণ প্রজন্মের কাছে তার গ্রহণযোগ্যতা বেশি।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে তার প্রথম কাজ হবে ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করা। পাশাপাশি ৮ ও ৯ সেপ্টেম্বরের আন্দোলনের সময়কার সহিংসতার তদন্ত, দুর্নীতি ও নেতাদের সম্পদের খতিয়ান পর্যালোচনাসহ স্বচ্ছতা আনয়নই হবে তার অগ্রাধিকার। সূত্র জানিয়েছে, শপথের পর রাতেই তিনি মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠক আহ্বান করেন এবং সেখানে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সংসদ ভেঙে দেওয়ার প্রস্তাব তোলা হতে পারে।

নেপালের বর্তমান অস্থির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সেনাবাহিনী রাস্তায় মোতায়েন রয়েছে। তবে সেনাপ্রধান সতর্ক করেছেন, স্পষ্ট কর্তৃত্ব ও সিদ্ধান্ত ছাড়া দীর্ঘদিন সেনা মোতায়েন সম্ভব হবে না।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া ছাত্র-জনতার আন্দোলন গত সপ্তাহে ভয়াবহ রূপ নেয়। সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) পুলিশের গুলিতে অন্তত ১৯ জন বিক্ষোভকারী নিহত হওয়ার পর আন্দোলন আরও তীব্র হয়। পরদিন মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগে বাধ্য হন। এ সময় তার বাসভবনসহ মন্ত্রী ও নেতাদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এ ধারাবাহিক সহিংসতায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৫১ জন প্রাণ হারিয়েছে।

নতুন দায়িত্ব নিয়ে সুশীলা কার্কি জানিয়েছেন, আলোচনার মাধ্যমে অস্থিরতা কাটিয়ে নেপালকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে নিয়ে যাওয়া তার সরকারের প্রধান লক্ষ্য।