আগামী বছরও শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেরিতে পৌঁছানোর শঙ্কা বাড়ছে

এফএনএস এক্সক্লুসিভ
| আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৪:৫৫ পিএম | প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:৫০ এএম
আগামী বছরও শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে পাঠ্যবই দেরিতে পৌঁছানোর শঙ্কা বাড়ছে

বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের পাঠ্যবই হাতে পাওয়া অনেকটা উৎসবে পরিণত হয়েছিল। কিন্তু চলতি বছর তাতে ছেদ পড়ে।চলতি বছর পাঠ্যবই হাতে পেতে মার্চ-এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের সময় লেগেছিলো। সেজন্য আগামী বছর যাতে যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেয়া যায় ওই লক্ষ্যে এনসিটিবিএকটি রোডম্যাপ অনুযায়ী আগেভাগে কাজ শুরু করে। সেজন্য সব দরপত্র প্রক্রিয়া শেষে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য ক্রয় কমিটিতে পাঠিয়েছিল জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)।কিন্তুক্রয় কমিটিমাধ্যমিকের ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির বই ছাপার অনুমোদন দেয়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবে নবম-দশম শ্রেণিরও অনুমোদন পাওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাতে বছরের শেষ সময়ে এসে এনসিটিবিকে২১ কোটি বইয়ের পুনঃ দরপত্রে যেতে হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) এবং প্রেস মালিকদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বছরের শেষ সময়ে এসে মাধ্যমিক ও সমপর্যায়ের প্রায় ২১ কোটি বইয়ের পুনঃ দরপত্র হচ্ছে। তার মধ্যে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বইয়ের পুনঃদরপত্র আহবান করা হয়েছে। আর পাঠ্যবই ছাপার বিষয়টি এখনো দরপত্র পর্যায়ে রয়েছে। সেজন্য ছাপার বিষয়টিতে আরো সময় লাগবে। ফলে সংশয়ের মধ্যে পড়েছেআগামী বছর যথাসময়ে শিক্ষার্থীরা পাঠ্যবই হাতে পাওয়ার বিষয়টি। এনসিটিবি  আন্তর্জাতিক দরপত্রে না গিয়ে এবার দেশীয় প্রতিষ্ঠানকেই বই ছাপার কাজ দিচ্ছে। 

সূত্র জানায়, গত আগস্ট মাসে ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে বই ছাপাতে পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা (পিপিআর) ২০০৮-এর বিধি ৮৩(১)(ক) কিছুটা সংশোধন আনা হয়। পিপিআরের ৮৩(১)(ক) অনুযায়ী উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতির ক্ষেত্রে দরপত্র প্রস্তুত ও দাখিলের জন্য বিজ্ঞাপনের তারিখ থেকে কমপক্ষে ৪২ দিন সময় দেয়ার নিয়ম রয়েছে। তবে জরুরি প্রয়োজন বা দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে ওইসময়সীমা কমানোর সুযোগ রয়েছে। ওই বিধিতে ক্রয় কমিটি সংশোধিত প্রস্তাব পাস করেছে। তার মাধ্যমে দরপত্রে সময়সীমা ৪২ দিনের জায়গায় ১৫ দিনে নামিয়ে আনা হয়েছে। তবে দরপত্র উন্মুক্তের পরও বেশ কিছু প্রক্রিয়া থাকে। এনসিটিবি ফাইল প্রস্তুত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবে। মন্ত্রণালয় তা ক্রয় কমিটিতে উপস্থাপন করবে। সেখান থেকে অনুমোদনের পর প্রেস মালিকদের সঙ্গে এনসিটিবির চুক্তি করতে হবে। বই ছাপার চুক্তির পর প্রথম পর্যায়ে প্রেস মালিকরাবই ছাপতে ৭০ দিন সময় পাবে। যদিও তারপর নানা উপায়ে ওই সময় বাড়ানো যায়। ফলে সব প্রক্রিয়া শেষে মাধ্যমিকের কিছু বই ছাপার কাজ আগামী অক্টোবরের প্রথমার্ধে শুরু হতে পারে। আবার কিছু বই ছাপার কাজ অক্টোবরের শেষেশুরু করতে হবে। ফলে ছাপার জন্য ৭০ দিন সময় নির্ধারিত থাকলেও জানুয়ারির প্রথমার্ধ পর্যন্তপ্রেস মালিকরাসুযোগ পাবেন। তারপরও নানা উপায়ে আরো পরে বই দেয়ার সুযোগ রয়েছে। ফলে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে জানুয়ারির শুরুতে শিক্ষার্থীদের হাতে সব বই তুলে দেয়া।

সূত্র আরো জানায়, প্রাথমিকের ৯ কোটি বই ছাপার প্রস্তাব ক্রয় কমিটি অনুমোদন করেছে। গত ১৯ আগস্ট ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির ১১ কোটি ৮৯ লাখ ৩২ হাজার ৮০২ কপি বই ছাপতে তিনটি প্রস্তাব ক্রয় কমিটিতে উত্থাপিত হয়। তার মোট ব্যয় ধরা হয় ৬০৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। তবে নানা অভিযোগ তুলে কমিটি সেটির অনুমোদন দেয়নি। তাছাড়া মাদরাসা পর্যায়ের ইবতেদায়ি ও নবম-দশম শ্রেণির দরপত্র মূল্যায়ন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে এনসিটিবি। ইতিমধ্যে ২০২৬ শিক্ষাবর্ষের বিনামূল্যের পাঠ্যবই ছাপানো ঘিরে দরপত্রের শুরুতেই নানা বিতর্ক দেখা দেয়। চলতি বছরও প্রেস মালিকরা নিজেদের মধ্যে সমঝোতা বা সিন্ডিকেট করে দরপত্রে অংশ নেয়। তার মধ্যে অন্তত ৪০টি প্রেস ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে নিম্নমানের বই দিয়েছে। এমনকি মনিটরিংয়ের দায়িত্বে থাকা এজেন্টদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ ওঠেছে। ইন্সপেকশন এজেন্সিগুলোআর্থিক সুবিধা নিয়ে নিম্নমানের বইকে ভালোমানের বই বলে সত্যায়ন করে। 

এদিকে এনসিটিবি সংশ্লিষ্টদের মতে, মাধ্যমিকের আগের দরপত্র বাতিল হলেও পুনঃদরপত্রেও বিগত সরকারের সহযোগী প্রেস মালিকদের অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তাদের কিছু কাজ পাওয়ার কথা। তবে যেসব প্রেস মালিকের সরাসরি আওয়ামী লীগের পদ-পদবি ছিল, তারা যেন কাজ না পান সে উপায় খোঁজা হচ্ছে। তারা দরপত্রে অংশ নিলেও কোনো না কোনো উপায়ে তাঁদের কাজের বাইরে রাখা হবে।

অন্যদিকে এ ব্যাপারে এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) অধ্যাপক ড. রিয়াদ চৌধুরী জানান, ইতিমধ্যে এনসিটিবি ষষ্ঠ শ্রেণির বইয়ের পুনঃ দরপত্র আহবান করেছে। সপ্তম শ্রেণির বইয়ের দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। তবে এবার দরপত্রসহ অন্য সব প্রক্রিয়ার সময় কমানো হয়েছে। এ বছর বইয়ের সংখ্যা ১০ কোটি কম। সেজন্য প্রেসগুলোর ক্যাপাসিটির চেয়ে কম কাজ দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া প্রেসের সংখ্যা বেড়েছে। এখন পুরোদমে প্রাথমিকের কাজ চলছে। সেগুলো আগেভাগেই শেষ হয়ে যাবে। তারপরও ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ তুলে আনতে কষ্ট হবে। কিন্তু তার পরও আশা করা যায় কাজটা করা যাবে।

UPEED

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে