২১০ দিনে কোরআনে হাফেজা হলেন ছালমা

এফএনএস (জি এম ইব্রাহীম; হাতিয়া, নোয়াখালী) : | প্রকাশ: ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৮:০৭ পিএম
২১০ দিনে কোরআনে হাফেজা হলেন ছালমা

নোয়াখালীর মূল ভূখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া। নদী ভাঙন, জীবন-জীবিকার টানাপোড়ন, শিক্ষা-সংস্কৃতির সীমাবদ্ধতার মাঝেও কোরআনের জ্যোতি  ছড়িয়েছেন ছোট্ট এক মেয়ে ছালমা আক্তার। মা-বাবার স্বপ্ন মেয়েকে  হাফেজা বানাবেন। সে  উদ্দেশ্যে ভর্তি করা হয় একটি হেফজ মাদ্রাসায় । মাত্র ১২ বছর বয়সে তার মেধা ও একাগ্রতায় ২১০ দিনে পবিত্র কোরআন হেফজ সম্পন্ন করে সে। যেখানে স্বাভাবিকভাবে একজন শিক্ষার্থীর কোরআন হিফজ করতে কমপক্ষে দুই থেকে আড়াই বছর সময়ের লেগে যায়। সেখানে ছালমা নিজের ইচ্ছাশক্তি ও পরিশ্রম কাজে লাগিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে হাফেজা হওয়ার কৃতিত্ব অর্জন করেছে।

ছালমা আক্তার নোয়াখালী দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার বুড়িরচর ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডর ছারোয়ার ও আমেনা দম্পতির কন্যা। সে মারকাযুল কুরআন মহিলা মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। তার এ কৃতিত্বের জন্য মাদ্রাসার পক্ষ থেকে দেওয়া হয় সম্মাননা। ছালমার এ অর্জন শুধু পরিবার নয় গোটা এলাকাকে গর্বিত করেছে।

স্থানীয়রা জানান, মহান আল্লাহপাকে মেহেরবানীতে ছালমার মাত্র ৭ মাসেই সম্পূর্ণ কোরআন হিফজ করা সম্ভব হয়েছে। এটি মহান রাব্বুল আলামিনের বিশেষ রহমত ও মহানগ্রন্থ আল কুরআনের বিশেষ মুজিজা (অলৌকিকত্ব)। তার এই সাফল্য অন্য মেয়েদেরও অনুপ্রেরণা জোগাবে ইসলামি শিক্ষায় এগিয়ে যেতে।

ছালামা আক্তার বলেন, “ওস্তাদ এবং মা বাবা তার জন্য অনেক মেহনত করেছে। তাদের মেহনত ছাড়া আমি কিছুই করতে পারতাম না। আমার এই সফলতা সবার মাঝে বিলিয়ে দিতে চায়। আমার মত যেন অন্য মেয়েরাও হাফেজা হতে পারে। সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন”।

একজন অভিভাবক বলেন, একসময় মানুষ মনে করতো মেয়েরা কেন হাফেজা হবে। তারা তো পুরুষের মত নামাজ পড়াতে পারবেনা।  কিন্তু একজন মেয়ে যদি ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত হয় তাহলে পুরো পরিবারে শান্তি আসবে। একজন আদর্শ নারী সমাজের ভিত্তি। আমিও আমার মেয়েকে এই মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়েছি। সে ৬ পারা হেফজ করেছে। সবাই তাদের জন্য দোয়া করবেন।

মাদ্রাসার প্রধান হাফেজ মাওলানা রাকিবুল ইসলাম বলেন, “আমরা জানুয়ারিতে ৩০ জন ছাত্রী নিয়ে মাদ্রাসার কার্যক্রম শুরু করি। এর মধ্যেই মাত্র ৭ মাসে ছালমা কোরআন হিফজ শেষ করেছে। আল্লাহর রহমতে এটি সম্ভব হয়েছে। আমরা দোয়া করি, সে যেন বড় আলেমা হয়ে দ্বীনের খেদমত করতে পারে।”তিনি আরও বলেন, এখানে শুধু হিফজ নয়, বাংলা, ইংরেজি ও আরবি শিক্ষার বিশেষ ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে, যাতে মেয়েরা ধর্মীয় জ্ঞান ছাড়াও আধুনিক শিক্ষায় দক্ষ হতে পারে।

ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রম থাকলে অসম্ভব বলে যে কিছু নেই তা ছালমা দেখিয়ে দিয়েছে। ছালমার এই অর্জন শুধু তার পরিবারের নয়, পুরো এলাকার জন্য গর্বের। সবাই দোয়া করছেন ছোট্ট এই হাফেজা একদিন জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করবে দেশ ও জাতিকে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে