দুর্নীতিবিরোধী তীব্র গণআন্দোলনের মুখে সরকার পতনের পর নেপালে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাওদেল শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) নতুন প্রধানমন্ত্রী সুশীলা কারকির পরামর্শে সংসদ ভেঙে দেওয়ার ঘোষণা দেন এবং আগামী বছরের ৫ মার্চ নির্বাচন আয়োজনের তারিখ নির্ধারণ করেন। তবে এই সিদ্ধান্তকে অসাংবিধানিক বলে আখ্যা দিয়ে শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) নেপালের শীর্ষস্থানীয় আটটি রাজনৈতিক দল সংসদ পুনর্বহালের দাবি জানিয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, নেপালি কংগ্রেস, সিপিএন-ইউএমএল ও মাওবাদী সেন্টারসহ আটটি দলের প্রধান হুইপ যৌথ বিবৃতিতে এ দাবি উত্থাপন করেন।
রাজধানী কাঠমান্ডুসহ দেশজুড়ে গত সপ্তাহে দুর্নীতিবিরোধী গণআন্দোলনে কমপক্ষে ৫১ জন নিহত এবং ১ হাজার ৩০০ জনেরও বেশি আহত হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধকরণ ও রাজনৈতিক অভিজাতদের বিরুদ্ধে গভীর ক্ষোভ থেকেই ‘জেন-জি আন্দোলন’ নামে পরিচিত এই তরুণপ্রজন্মের বিক্ষোভ শুরু হয়। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা ওলি পদত্যাগ করলেও উত্তেজনা প্রশমিত হয়নি। বিক্ষোভকারীরা সরকারি ভবনে অগ্নিসংযোগ করে এবং রাজপথে নেমে আসে হাজারো মানুষ।
এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার অন্তর্বর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন সুপ্রিম কোর্টের সাবেক প্রধান বিচারপতি ৭৩ বছর বয়সী সুশীলা কারকি। তিনি নেপালের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। শপথের পরদিন শনিবার তিনি হাসপাতালে গিয়ে পুলিশের গুলিতে আহত বিক্ষোভকারীদের খোঁজখবর নেন এবং তাদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। আশা করা হচ্ছে, শিগগিরই তিনি মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করবেন।
প্রেসিডেন্ট পাওদেল শনিবার এক বিবৃতিতে বলেন, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথে নেপাল অগ্রসর হচ্ছে। তিনি সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়ে বলেন, সংবিধান ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এখনও বহাল আছে। ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণকে একটি অধিক কার্যকর গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে।
এদিকে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আপাত সমর্থন জানালেও বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণ প্রজন্ম সংসদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে। তাদের দাবি, নির্বাচনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই নির্ধারিত হওয়া উচিত।
নেপালের রাজধানীতে সেনা মোতায়েন ধীরে ধীরে কমানো হচ্ছে, গণপরিবহনও চালু হয়েছে। তবে কাঠমান্ডুর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় এখনো সভা-সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। অগ্নিসংযোগে ক্ষতিগ্রস্ত প্রধানমন্ত্রীর পুরনো কার্যালয় থেকে সরঞ্জাম নতুন ভবনে স্থানান্তরের কাজ চলছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে পূর্ণাঙ্গ অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।