লাশ পোড়ানোর মামলা

ইতিহাসে নজিরবিহীন বর্বরতার বিচার চাই: চিফ প্রসিকিউটর

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৫:০১ পিএম
ইতিহাসে নজিরবিহীন বর্বরতার বিচার চাই: চিফ প্রসিকিউটর
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো গণঅভ্যুত্থানকালে আন্দোলনকারীদের লাশ পোড়ানোর মতো নৃশংস ঘটনার বিচার আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। আশুলিয়ায় ছয়জন আন্দোলনকারীর লাশ পোড়ানোর ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার সূচনা বক্তব্যে রাষ্ট্রপক্ষ কঠোর ভাষায় এই অপরাধকে বিশ্বের ইতিহাসেই নজিরবিহীন বলে উল্লেখ করেছে।

রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২–এ চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এ সময় ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর উপস্থিত ছিলেন। আগামী সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, এই বিচার কেবল একটি মামলার নিষ্পত্তি নয়, এটি জাতির ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায় হয়ে থাকবে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বিশ্বকে একটি শক্ত বার্তা দেওয়া হচ্ছে—কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, সে যত প্রভাবশালী বা ক্ষমতাবানই হোক না কেন। এই ট্রাইব্যুনাল প্রমাণ করবে, বাংলাদেশ ন্যায়ভিত্তিক, মানবিক এবং আইনের শাসনের প্রতি অঙ্গীকারবদ্ধ একটি রাষ্ট্র।

তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আশুলিয়ায় রাষ্ট্রীয় বাহিনী ২৯ জন নিরীহ আন্দোলনকারীকে গুলি করে হত্যা করে এবং পাঁচটি মরদেহসহ গুরুতর আহত এক ব্যক্তিকে পুলিশ ভ্যানে তুলে আগুনে পুড়িয়ে ফেলে। এই লাশ পোড়ানোর বর্বরতা শুধু বাংলাদেশের ইতিহাসেই নয়, বিশ্বের ইতিহাসেও নজিরবিহীন। এর উদ্দেশ্য ছিল ভয় সৃষ্টি করা, জনগণের ন্যায্য দাবি দমন করা এবং অপরাধের দায় ছাত্রসমাজের ওপর চাপিয়ে দেওয়া।

চিফ প্রসিকিউটর আরও বলেন, উপস্থাপিত প্রমাণসমূহ দিবালোকের মতো স্পষ্ট, স্বচ্ছ ও অকাট্য। এগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য, সরকারি রেকর্ড, ফরেনসিক প্রতিবেদন ও ডিজিটাল নথি। এই বিচার কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়; বরং ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও গণতান্ত্রিক চেতনা রক্ষার প্রতীক।

মামলায় মোট আসামি ১৬ জন। তাঁদের মধ্যে আটজন গ্রেপ্তার আছেন, আরেক সাবেক সংসদ সদস্যসহ আটজন পলাতক। গ্রেপ্তার আসামিদের মধ্যে আছেন সাভার সার্কেলের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. শহিদুল ইসলাম, ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল্লাহিল কাফী এবং আশুলিয়া থানার সাবেক উপপরিদর্শক ও কনস্টেবলসহ পুলিশ সদস্যরা।

রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, এই বিচার জাতির গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের প্রতি সম্মিলিত অঙ্গীকারের প্রতীক হবে। এটি সেই সব শহীদ পরিবারের আত্মত্যাগের প্রতি সম্মান এবং ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃঢ় বার্তা যে, অপরাধী যত শক্তিশালীই হোক না কেন, বিচারের মুখোমুখি হতে হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে