অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী বিচারপতি সুশীলা কারকি

“নেপালে জেন–জি আন্দোলনে নিহতদের ‘শহীদ’ ঘোষণা, পরিবার পাবে ১০ লাখ রুপি”

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৫:২৯ পিএম
“নেপালে জেন–জি আন্দোলনে নিহতদের ‘শহীদ’ ঘোষণা,  পরিবার পাবে ১০ লাখ রুপি”

নেপালে টানা আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে প্রথম নারী অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কারকি। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানী কাঠমান্ডুর লাইন চৌরে শহীদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। এরপর সিংহ দরবারে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে তিনি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে স্বাক্ষর করেন।

হিমালয়ান টাইমস জানিয়েছে, কারকির স্বাক্ষরিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেন–জি আন্দোলনে নিহতদের ‘শহীদ’ ঘোষণা করা হয়েছে এবং নিহতদের পরিবারকে ১০ লাখ রুপি আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আন্দোলনে আহত ১৩৪ জন বিক্ষোভকারী ও ৫৭ জন পুলিশ সদস্যের জন্য বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে সরকার। একই সঙ্গে আন্দোলনে হওয়া ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী এখন পর্যন্ত নিহতের সংখ্যা ৭২ জন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ৫৯ জন বিক্ষোভকারী, ১০ জন বন্দী ও ৩ জন পুলিশ সদস্য।

অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম ভাষণে সুশীলা কারকি আন্দোলনের সহিংস ঘটনাকে দেশের বিরুদ্ধে ‘অপরাধমূলক কাজ’ হিসেবে আখ্যা দেন। কাঠমান্ডু পোস্ট জানিয়েছে, তিনি বলেন, “অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা তদন্ত করতে হবে এবং দায়ীদের বিচারের মুখোমুখি করা হবে।” তিনি অভিযোগ করেন, আন্দোলনের আড়ালে পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত পাওয়া গেছে এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।

কারকি বলেন, “মাত্র ২৭ ঘণ্টার আন্দোলনেই বড় পরিবর্তনের দাবি উঠেছে। এই দাবিগুলো পূরণ করতে আমাদের সবাইকে দৃঢ়তার সঙ্গে কাজ করতে হবে।” তিনি স্বীকার করেন, নিজে ইচ্ছায় নয় বরং সবার অনুরোধে তাঁকে দায়িত্ব নিতে হয়েছে।

৭৩ বছর বয়সী সুশীলা কারকি দুর্নীতিবিরোধী ভাবমূর্তির জন্য পরিচিত। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি সহিংসতায় ক্ষতিগ্রস্ত সংসদ ভবন, সুপ্রিম কোর্ট ও ব্যবসায়িক কমপ্লেক্স পুনর্গঠন এবং দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন। তিনি আশ্বাস দেন, আগামী বছরের ৫ মার্চ ঘোষিত নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথ তৈরি হবে।

অন্যদিকে, নেপালের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পৌডেলের সংসদ ভেঙে দেওয়ার সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়েছে। কংগ্রেস, সিপিএন–ইউএমএল ও মাওবাদী সেন্টারসহ আটটি দল শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে প্রেসিডেন্টের পদক্ষেপকে ‘সংবিধানবিরোধী’ আখ্যা দেয়। তবে বিক্ষোভকারীদের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল সংসদ ভেঙে দেওয়া।

প্রেসিডেন্ট পৌডেল অবশ্য সব পক্ষকে সংযম দেখানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁর মতে, “সংবিধান ও সংসদীয় ব্যবস্থা টিকে আছে। আগামী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে কার্যকর গণতন্ত্রের পথে অগ্রসর হওয়ার সুযোগ রয়েছে।”

বিশ্লেষকদের মতে, সুশীলা কারকির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ হলো আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনা, আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্ত তরুণ প্রজন্মকে আশ্বস্ত করা এবং সাংবিধানিক শৃঙ্খলা রক্ষায় আস্থা তৈরি করা।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে