কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন চিরনিদ্রায়

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:৪৫ এএম
কিংবদন্তি শিল্পী ফরিদা পারভীন চিরনিদ্রায়

বাংলাদেশের লোকসঙ্গীত অঙ্গনের বরেণ্য শিল্পী ও লালনগীতির সম্রাজ্ঞী ফরিদা পারভীনকে কুষ্টিয়ায় মা–বাবার কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়েছে। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া কেন্দ্রীয় পৌর গোরস্তানে তার জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়।

এর আগে রাত ৮টা ২৩ মিনিটে মরদেহবাহী অ্যাম্বুল্যান্স গোরস্তানে পৌঁছালে সেখানে ভক্ত, সংগীতশিল্পী, স্বজন ও স্থানীয়দের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। তাকে শেষবারের মতো দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুটে আসেন অসংখ্য মানুষ।

ফরিদা পারভীন শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭১ বছর। তিনি স্বামী ও চার সন্তান রেখে গেছেন। দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতা, ডায়াবেটিসসহ নানা শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। চলতি বছরের ২ সেপ্টেম্বর ওই হাসপাতালেই তাকে ভর্তি করা হলে অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয় এবং পরে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

মৃত্যুর সংবাদে দেশজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে। শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে রোববার সকালে মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নেওয়া হয়। সেখানে সর্বস্তরের মানুষ ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কুষ্টিয়ায়।

১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্মগ্রহণ করেন ফরিদা পারভীন। ১৪ বছর বয়সে পেশাদার সংগীতজীবন শুরু করা এই শিল্পী শুরুতে নজরুলসংগীত ও আধুনিক গানে মনোনিবেশ করলেও পরবর্তীতে লালনগীতির মাধ্যমে দেশ-বিদেশে খ্যাতি অর্জন করেন। স্বাধীনতার পর কুষ্টিয়ার দোলপূর্ণিমার মহাসমাবেশে প্রথমবার লালনের গান পরিবেশন করেন তিনি। বাবার উৎসাহে মকছেদ আলী সাঁইয়ের কাছে লালনের গান শেখা শুরু করেন, পরে খোদা বক্স সাঁই, করিম সাঁই, ব্রজেন দাসসহ গুরুপরম্পরার কাছে তালিম নেন।

লালনের দর্শন ও সুরকে বিশ্বমঞ্চে পৌঁছে দিতে ফরিদা পারভীনের অবদান অনস্বীকার্য। তার কণ্ঠে লালনের গান বেজেছে জাপান, সুইডেন, ডেনমার্ক, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যসহ বহু দেশে।

সংগীতে অবদানের জন্য তিনি একুশে পদক (১৯৮৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩), ফুকুওয়াকা এশীয় সাংস্কৃতিক পুরস্কার (২০০৮), সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস এবং অনন্যা শীর্ষ দশসহ একাধিক পুরস্কার অর্জন করেন।

তার প্রয়াণে দেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গন এক কিংবদন্তিকে হারাল, যিনি লালনগীতির মাধ্যমে বাংলা লোকসংগীতকে বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে