নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার ২নং কেশারপাড় ইউনিয়নের খাজুরিয়া ৩ নং ওয়ার্ডে খাজুরিয়া মধ্য পাড়া গ্রামের আজিজ মাষ্টার বাড়ির গৃহবধূ মোকছেদা আক্তার প্রিয়া (২৩) রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একসঙ্গে জন্ম দেওয়া ৬ জমজ নবজাতক শিশুর মধ্যে ৪ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। শিশুদের জন্মের আনন্দ মিশে গেলো ট্র্যাজেডিতে। রোববার রাতে দুইজন এবং আজ সোমবার ভোরে আরও দুজনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে তিনজন ছেলে এবং একজন কন্যা সন্তান রয়েছে।
সোমবার সকালে জানাজা শেষে ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে ৪ জমজ শিশুর লাশ দাফন করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন শিশু গুলোর দাদা মোঃ রুহুল আমিন। জীবিত জমজ দুই জনের মধ্যে একজনের অবস্থা সংকটাপন্ন এবং গাইনী মা প্রীয়া শারীরিক ভাবে অসুস্থ। তাদের সুস্থ্যতার জন্য দেশবাসীর নিকট দোয়া চেয়েছেন পরিবারের পক্ষ থেকে।
সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে ঢামেক হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউতে) ও রোববার রাত ৩টার দিকে রাজধানীর কাঁটাবনের একটি বেসরকারি হাসপাতালে (এনআইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুদের মৃত্যু হয়। মৃত্যুবণকরী শিশুরা হচ্ছে সেনবাগ উপজেলা ২নং কেশাড়পাড় ইউপির খাজুরিয়া গ্রামের কাতার প্রবাসী মোঃ হানিফের ছেলে-মেয়ে।
জানাগেছে, রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল(ঢামেক)এর গাইনি বিভাগে স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে নোয়াখালীর সেনবাগের কাতার প্রবাসীর স্ত্রী মোকসেদা আক্তার প্রীয়া (২৩) তিন ছেলে ও তিন মেয়ে কন্যা জমজ সন্তানের জন্ম দেন। তবে, চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মাত্র ২৭ সপ্তাহে প্রসব হওয়ায় এবং নবজাতকদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক। বর্তমানে দুই কন্যা শিশু রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালের নবজাতক নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (এনআইসিইউতে) সংকটাপন্ন অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছে।
এর আগে রোববার সকাল ৯টার দিকে নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার বাসিন্দা মোকসেদা আক্তার প্রীয়া (২৩) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল(ঢামেক) হাসপাতালের গাইনি বিভাগের লেবার ওয়ার্ডে একসঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম দেন। জন্মের পরপরই তিন নবজাতককে ঢামেকের এনআইসিইউতে এবং তিনজনকে কাঁটাবনের একটি বেসরকারি হাসপাতালের এনআইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগের ইউনিট-১ এর সহযোগী অধ্যাপক ডা. আবিদা সুলতানা জানান, শনিবার রাতে প্রীয়া হাসপাতালে ভর্তি হন। সকালে তিনি একসঙ্গে ছয় জমজ সন্তানের জন্ম দেন। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় এটি ‘বেবি’ বলা যায় না, এটি আসলে ২৭ সপ্তাহের ইনএবিটেবল অ্যাবরশন। এর আগে প্রীয়ার একটি পূর্ণবয়স্ক শিশু জন্ম হয়েছিল, তবে সেটি ডেলিভারির সময় মারা যায়। এবার জন্ম নেওয়া ছয় নবজাতকের মধ্যে তিনজনের ওজন প্রায় ৯০০ গ্রাম এবং বাকি তিনজনের ৮০০ গ্রাম।
ডা. আবিদা সুলতানা আরও বলেন, আমাদের দেশে সাধারণত ২৮ সপ্তাহকে ‘ভায়াবল এইজ’ হিসেবে ধরা হয়। এই রোগীর ক্ষেত্রে ডেলিভারি আগেই হয়ে গেছে। তবে ঢামেকের উন্নত এনআইসিইউ ফ্যাসিলিটি থাকায় ভাগ্যে থাকলে অপর দুই শিশু বেঁচে যেতে পারে। তিনি বলেন, সাধারণত একসঙ্গে ছয়টি শিশু গর্ভে ধারণ করা স্বাভাবিক ভাবে সম্ভব নয়। রোগী ওভুলেশন ইন্ডাকশন ড্রাগ সেবন করেছিলেন, যার কারণে একসঙ্গে একাধিক সন্তান ধারণ হয়েছে। জরায়ুর সীমিত ধারণক্ষমতার কারণে আগেভাগেই ডেলিভারি হয়েছে। এখন বাকী দুই শিশুর পুরো বিষয়টি আল্লাহর হাতে, আমরা সর্বোচ্চ চিকিৎসা দিচ্ছি।