ভারতে ওয়াকফ (সংশোধনী) আইনকে ঘিরে তৈরি হওয়া ব্যাপক বিতর্ক ও মামলার প্রেক্ষাপটে আইনটির কয়েকটি মূল ধারা আপাতত স্থগিত করেছে সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি বি. আর. গাভাই ও বিচারপতি এ. জি. মাসিহের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালত মনে করেছে, আইনটির পুরো অংশ স্থগিত রাখার প্রয়োজন নেই, তবে কিছু ধারা নাগরিক অধিকার ও ক্ষমতার বিভাজনের নীতি লঙ্ঘনের ঝুঁকি তৈরি করছে।
নতুন আইনে জেলা প্রশাসকদের হাতে ওয়াকফ সম্পত্তির মালিকানা নির্ধারণের চূড়ান্ত ক্ষমতা দেওয়া হয়েছিল। আদালত বলেছে, কোনো প্রশাসককে ব্যক্তিগত নাগরিক অধিকার নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া যাবে না। মামলার নিষ্পত্তি ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে না হওয়া পর্যন্ত তৃতীয় পক্ষের কোনো অধিকারও সৃষ্টি করা যাবে না। তাই জেলা প্রশাসকের হাতে দেওয়া ক্ষমতাসংক্রান্ত ধারা আপাতত স্থগিত থাকবে।
সংশোধিত আইনে বলা হয়েছিল, অন্তত পাঁচ বছর ইসলাম অনুশীলন করেছেন এমন ব্যক্তিরাই ওয়াকফ ঘোষণা করতে পারবেন। সুপ্রিম কোর্ট এই ধারাটিকেও স্থগিত করেছে। আদালতের ভাষায়, কোনো কার্যকর ব্যবস্থাপনা ছাড়া এ ধরনের ধারা “ইচ্ছামতো ক্ষমতার প্রয়োগে” রূপ নিতে পারে।
আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো ওয়াকফ বোর্ডে তিনজনের বেশি অমুসলিম সদস্য রাখা যাবে না এবং কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে চারজনের বেশি অমুসলিম সদস্য থাকতে পারবেন না। তবে রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পদে অমুসলিম সদস্য নিয়োগের সুযোগ রাখা হলেও, আদালত বলেছে সম্ভব হলে মুসলিম সদস্যকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।
এই মামলার অন্যতম আবেদনকারী অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বোর্ডের সদস্য সৈয়দ কাসিম রাসুল ইলিয়াস সংবাদ সংস্থা এএনআইকে বলেছেন, আদালত তাদের অনেক গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি গ্রহণ করেছে। তিনি জানান, ‘ওয়াকফ বাই ইউজার’ এবং সংরক্ষিত স্মৃতিস্তম্ভে তৃতীয় পক্ষের দাবি না রাখার বিষয় আদালত মেনে নিয়েছে। একই সঙ্গে পাঁচ বছরের শর্তও বাদ দেওয়া হয়েছে।
১৯৯৫ সালের ওয়াকফ আইনে সংশোধনী এনে চলতি বছরের ৫ এপ্রিল সংসদে আইনটি পাস হয় এবং রাষ্ট্রপতির অনুমোদন পায়। সরকার দাবি করে, বহু ওয়াকফ সম্পত্তি জমি-বিরোধ ও দখল সমস্যায় জড়িয়ে আছে; নতুন আইন এ সমস্যার সমাধানের জন্যই আনা হয়েছে। তবে মুসলিম সংগঠনগুলো একে অসাংবিধানিক আখ্যা দিয়ে ওয়াকফ জমি দখলের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখেছে। আইনটি কার্যকর হওয়ার পর থেকেই দেশজুড়ে ব্যাপক আন্দোলন ও একাধিক মামলা দায়ের করা হয়। সূত্র: এনডিটিভি