আন্তর্জাতিক জলসীমায় ভেনিজুয়েলা থেকে আসা কথিত মাদকবাহী একটি নৌযানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা হামলা চালিয়েছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) ট্রাম্প দাবি করেন, “সহিংস মাদক কার্টেল ও নারকো-সন্ত্রাসীদের” লক্ষ্য করেই এই অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে।
হোয়াইট হাউস থেকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রেসিডেন্টের নির্দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী দ্বিতীয় দফায় এ ধরনের হামলা চালিয়েছে। ট্রাম্প দাবি করেন, হামলার পর সমুদ্র জুড়ে কোকেন ও ফেন্টানিলের বড় বড় চালান ভেসে থাকতে দেখা যায়। তবে হামলার শিকার নৌযানে মাদক ছিল—এমন কোনো প্রমাণ প্রকাশ করা হয়নি।
এর আগে সেপ্টেম্বরের শুরুর দিকে পরিচালিত প্রথম দফার হামলায় ১১ জন নিহত হয়েছিলেন। ওই ঘটনার পর ভেনিজুয়েলার পক্ষ থেকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানানো হয়। দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছাকৃতভাবে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে এবং তাদের দেশের ওপর বোমা হামলার হুমকি দিচ্ছে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ভেনিজুয়েলা বৈধ আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগে প্রস্তুত।
মার্কিন কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ভেনিজুয়েলার উচ্চপর্যায়ের ব্যক্তিরা ‘কার্টেল অব দ্য সানস’ নামের একটি মাদকচক্রের সঙ্গে যুক্ত। এমনকি প্রেসিডেন্ট মাদুরোর বিরুদ্ধেও এই চক্র পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে। তার গ্রেপ্তারে যুক্তরাষ্ট্র ৫ কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছে। তবে মাদুরো এসব অভিযোগ অস্বীকার করে একে “আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
ট্রাম্প সোমবার সতর্ক করে বলেন, “যারা যুক্তরাষ্ট্রে মাদক আনার চেষ্টা করছে, তাদের আমরা খুঁজে বের করব। সতর্ক থাকুন—আমেরিকানদের হত্যার ক্ষমতা রাখে এমন মাদক বহন করলে, আপনাদের আমরা শিকার করব।” তবে সমালোচকরা প্রশ্ন তুলেছেন, অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে বিচার না করে সরাসরি হামলা চালানো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং এটি বিচারবহির্ভূত হত্যার শামিল হতে পারে।
এদিকে ভেনিজুয়েলার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইয়ভান গিল অভিযোগ করেছেন, সম্প্রতি মার্কিন নৌবাহিনী তাদের একটি ছোট মাছ ধরার নৌযান আট ঘণ্টা অবৈধভাবে দখলে রেখেছিল। তার দাবি, এসব কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ক্যারিবীয় অঞ্চলে সংঘাত উসকে দিতে চাইছে।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের জুলাইয়ে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে পশ্চিমা দেশগুলোর অনেকে বিরোধী প্রার্থী এডমুন্ডো গনসালেসকে বিজয়ী বলে দাবি করলেও মাদুরো নিজেকে বৈধভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা দেন। এরপর থেকেই ওয়াশিংটন-কারাকাস সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।