নেপালের অস্থিরতায় পশ্চিমবঙ্গ–কেন্দ্র একসুরে নিরাপত্তা জোরদার

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:১৮ এএম
নেপালের অস্থিরতায় পশ্চিমবঙ্গ–কেন্দ্র একসুরে নিরাপত্তা জোরদার

নেপালে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অভ্যুত্থান ও অস্থিরতা পশ্চিমবঙ্গের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে নতুন ঝুঁকি তৈরি করেছে। দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকারের মধ্যে রাজনৈতিক শত্রুতা থাকলেও সীমান্ত–সংকট মোকাবিলায় এবার দুই পক্ষই আপাত সমঝোতায় পৌঁছেছে।

শিলিগুড়ির চিকেন’স নেক এলাকায় নেপালের সঙ্গে ভারতের প্রায় ১০০ কিলোমিটার স্থলসীমান্ত রয়েছে। নেপালে গত ৯ সেপ্টেম্বর তরুণ প্রজন্মের বিক্ষোভে ১১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা অলির সরকারের পতন ঘটে এবং সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেয়। পরদিন অন্তর্বর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন সাবেক বিচারপতি সুশীলা কার্কি। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতা এখনও কাটেনি, ফলে সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ ও নকশালপন্থী প্রভাব ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) পশ্চিমবঙ্গ সফরে গেলে কলকাতায় তার সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠক শেষে মমতা বলেন, “জাতীয় নিরাপত্তা ও জাতীয় স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ইস্যুগুলোতে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে কোনো দ্বন্দ্ব নেই। আমরা এসব বিষয়ে এক।”

বৈঠকে দুটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। প্রথমত, ভারত–নেপাল সীমান্ত পাহারায় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের পাশাপাশি আধাসামরিক বাহিনী সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি) নিয়োজিত থাকবে। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় সরকার ও পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের মধ্যে ব্যাপকভাবে গোয়েন্দা তথ্যের আদান–প্রদান চলবে।

এদিকে পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ড সদরদপ্তর ফোর্ট উইলিয়ামে সেনাকোর কমান্ডারদের এক যৌথ বৈঠকে অংশ নেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল। সীমান্তে সেনা ও আধাসামরিক বাহিনীর টহল বাড়ানো হয়েছে, পানিটানকি সীমান্ত সেতুতে নজরদারি জোরদার করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের গোয়েন্দা ইউনিট থেকে নিয়মিতভাবে রিপোর্ট পাঠানো হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার কাছে।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বরাতে জানা গেছে, কাঠমান্ডুর বাজারে চীনা মুদ্রার ব্যবহার বেড়েছে, যা প্রতিবেশী দেশে চীনা প্রভাব বিস্তারের ইঙ্গিত দেয়। এ কারণে ভারত সীমান্ত নিরাপত্তা আরও সতর্কভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।

এ পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক শত্রুতা ভুলে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার অভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। যদিও পশ্চিমবঙ্গে বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের ক্ষমতার লড়াই অব্যাহত রয়েছে, সীমান্ত সুরক্ষা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে বিরল সহযোগিতা এখন স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।