নোয়াখালীর হাতিয়ার উপকূলে বঙ্গোপসাগরে জলদস্যুদের ধাওয়ায় এমভি আবুল কালাম নামের একটি মাছ ধরার ট্রলার ডুবে গেছে। ভয়াবহ এ ঘটনায় ১৮ জেলে দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টা সাগরে ভেসে থাকার পর জীবিত উদ্ধার হয়েছেন। ঘটনাটি ঘটে রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নিঝুম দ্বীপের দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে। সোমবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অন্য জেলেদের সহায়তায় চরইশ্বর বাংলাবাজার ঘাটে তাদের নিয়ে আসা হয়।
উদ্ধার হওয়া জেলেরা জানিয়েছেন, শুক্রবার সকালে ট্রলারটি মাছ ধরতে সাগরে যায়। রোববার সকালে হঠাৎ জলদস্যুরা ধাওয়া করলে ট্রলারটি দ্রুত পালাতে চেষ্টা করে। একপর্যায়ে জলদস্যুরা পেছন থেকে ধাক্কা দিলে ট্রলারটি উল্টে যায়। মুহূর্তের মধ্যে তা ডুবে যায় এবং সবাই প্রাণ বাঁচাতে ভগ্নাংশ ধরে ভেসে থাকেন। পরে স্থানীয় দুটি ট্রলার তাদের উদ্ধার করে।
ট্রলারের মালিক আবুল কালাম কালু মাঝি বলেন, কোটি টাকার সম্পদ চোখের সামনে পানিতে হারাতে হলো। “ট্রলার ডোবার পর সামান্য অংশ ভেসে ছিল। সেটি ধরে আমরা একটানা ২৪ ঘণ্টা ভেসেছিলাম।”
এ ঘটনায় উপকূলীয় জেলেদের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। মৎস্য ব্যবসায়ী লুৎফুল্লাহিল নিশান বলেন, “নদী ও সাগরে আবারও ডাকাতদের তাণ্ডব শুরু হয়েছে। এতে জেলে ও নৌকার মালিকরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিন কাটাচ্ছেন। আমাদের উপার্জন বন্ধ হয়ে পরিবার-পরিজন অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছে। আমরা জোর দাবি জানাই— কোস্টগার্ড ও প্রশাসন যেন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।”
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সীমাবদ্ধতার কথা বলেছে। হাতিয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আশিকুর রহমান বলেন, “ঘটনাটি আমরা শুনেছি। তবে ঘটনাস্থল নিঝুম দ্বীপ থেকে অনেক দূরে হওয়ায় কিছুই করার ছিল না। আমাদের ভারী নৌযান নেই, তাই গভীর সমুদ্রে অভিযান চালানো সম্ভব হয় না।” হাতিয়া থানার ওসি একেএম আজমল হুদা জানান, “বঙ্গোপসাগরে কয়েকটি ট্রলার ডাকাতির খবর পেয়েছি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে এসব প্রতিরোধে সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া সমাধান সম্ভব নয়।”
জেলেরা আশঙ্কা করছেন, সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে আরও বড় ধরনের প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটতে পারে।