মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালী মহলকে প্লট বরাদ্দ দিতে গিয়ে বন উজাড় করে অপূরণীয় ক্ষতি করেছে রাজউক— এমন মন্তব্য করেছেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। তিনি বলেন, বনভূমি কেটে তৈরি করা এসব প্লটের অনেকগুলো এখনও অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর একটি হোটেলে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন *“একটি টেকসই জীবন: বাংলাদেশের স্বাস্থ্য ও অর্থনীতির ওপর তাপের প্রভাব”* উদ্বোধনকালে এ মন্তব্য করেন তিনি। রিজওয়ানা হাসান জানান, রাজউক যখন ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান তৈরি করে, তখন ব্যবসায়ীরা নিজেদের স্বার্থে এর বিরোধিতা করে। তার মতে, নগর পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন না করায় ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং নগরবাসীর জীবনযাত্রা ঝুঁকির মুখে পড়ছে।
তিনি বলেন, “তাপমাত্রা বৃদ্ধি এখন আর কেবল তাত্ত্বিক বিষয় নয়, প্রতিটি নাগরিক এর প্রভাব ভোগ করছে। গবেষণা প্রতিবেদনে সীমাবদ্ধ না থেকে সুপারিশগুলোকে সময়সীমাবদ্ধ কর্মপরিকল্পনায় রূপ দিতে হবে। একইসঙ্গে সুশাসন, নগর সবুজায়ন, কার্যকর গণপরিবহন ও ভূমি-ব্যবহার পরিকল্পনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।”
বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ৪৩ বছরে বাংলাদেশের গড় তাপমাত্রা বেড়েছে ১.১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকার অবস্থা সবচেয়ে নাজুক— এখানে তাপসূচক গড় তাপমাত্রার চেয়ে ৬৫ শতাংশ বেশি। নগরীতে সবুজ কমে যাওয়া ও জীবনযাত্রার ধরন এর মূল কারণ। শুধু ২০২৪ সালেই তাপদাহের কারণে বাংলাদেশে ২৫ মিলিয়ন কর্মদিবস নষ্ট হয়েছে, আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১.৩৩ বিলিয়ন ডলার। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়, ২০৫০ সালের মধ্যে এই অতি তাপমাত্রা দারিদ্র্য বিমোচন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদা) অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান, বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটান ডিভিশনের পরিচালক জাঁ পেসমে এবং সাউথ এশিয়া হেলথ নিউট্রিশন অ্যান্ড পপুলেশন প্র্যাকটিসের প্র্যাকটিস ম্যানেজার ড. ফেং ঝাও। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিশ্বব্যাংকের সিনিয়র অপারেশনস অফিসার ইফফাত মাহমুদ ও সিনিয়র হেলথ স্পেশালিস্ট ওয়ামেক এ. রাজা।
রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, তাপদাহ মোকাবিলায় শুধু প্রযুক্তি বা অবকাঠামো নয়, বরং নাগরিক সচেতনতা ও সংস্কৃতির পরিবর্তন জরুরি। তিনি বলেন, “ছোট ছোট পদক্ষেপ— যেমন অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ব্যবহার কমানো— বড় প্রভাব ফেলতে পারে। সবুজ নগর মানেই সুস্থ জীবন।”