রংপুরে পদ্মরাগ ট্রেনের পাঁচ বগি লাইনচ্যুত, দীর্ঘ ভোগান্তির পর উদ্ধার

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:৫২ এএম
রংপুরে পদ্মরাগ ট্রেনের পাঁচ বগি লাইনচ্যুত, দীর্ঘ ভোগান্তির পর উদ্ধার

রংপুরের পীরগাছা স্টেশন এলাকায় যাত্রীবাহী পদ্মরাগ ট্রেনের পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ায় সান্তাহার-লালমনিরহাট রেল যোগাযোগ দীর্ঘ সময়ের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে ট্রেনে থাকা পাঁচ শতাধিক যাত্রী চরম দুর্ভোগে পড়েন।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, সান্তাহার থেকে লালমনিরহাটগামী পদ্মরাগ ট্রেনটি পীরগাছা স্টেশনে এসে দোলনচাঁপা এক্সপ্রেসের জন্য অপেক্ষা করছিল। দোলনচাঁপা স্টেশন ছেড়ে গেলে পদ্মরাগ পুনরায় যাত্রা শুরু করে। কিন্তু এক নম্বর লাইন থেকে দুই নম্বর লাইনে ক্রসিংয়ের সময় হঠাৎ পাঁচটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। বড় ধরনের দুর্ঘটনা না ঘটলেও লাইন ও সিগন্যাল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

দীর্ঘ ১১ ঘণ্টার প্রচেষ্টায় লালমনিরহাট ও পার্বতীপুর থেকে আসা দুটি রিলিফ ট্রেনের সহায়তায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে উদ্ধার কাজ শেষ হয়। উদ্ধার অভিযানে অংশ নেওয়া এক কর্মী গুরুতর আহত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ঘটনাস্থলের কাঠের স্লিপারগুলো পচে গিয়েছিল, সেখানে পর্যাপ্ত পাথরও ছিল না। রেলের পাতগুলোও ছিল জংধরা। বহু বছর ধরে পশ্চিমাঞ্চলের মিটার গেজ লাইন সংস্কার না হওয়ায় এমন দুর্ঘটনা ঘটছে বলে অভিযোগ করেন তারা। এক প্রত্যক্ষদর্শীর মন্তব্য, “যদি এটি স্টেশনের বাইরে চলন্ত অবস্থায় ঘটত, তাহলে ভয়াবহ প্রাণহানি ঘটতে পারত।”

দুর্ঘটনার কারণে রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রামসহ আশপাশের অঞ্চলে আন্তঃনগর ও লোকাল ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে হাজারো যাত্রী গন্তব্যে পৌঁছাতে না পেরে বিপাকে পড়েন। কেউ কেউ বিকল্প যানবাহনে যাত্রা সম্পন্ন করেন।

রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দুর্ঘটনায় কোনো প্রাণহানি হয়নি। এ ঘটনায় বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা প্রাথমিকভাবে লাইন, বগি ও সিগন্যাল—এই তিনটি দিক থেকে তদন্ত শুরু করেছেন।

রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল জানান, উপজেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে যৌথভাবে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে। কঠোর তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন। রংপুর বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুল ইসলামও জানান, এই ঘটনায় যাদের গাফিলতি পাওয়া যাবে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। তিনি দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা না ঘটায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যমতে, দেশের ২ হাজার ৮০০ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে ১ হাজার ৪২৭ কিলোমিটার। এর অধিকাংশই মিটার গেজ এবং দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে