উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়ার উপকূলে সুদানি শরণার্থী বহনকারী একটি নৌকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ৫০ জন প্রাণ হারিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) জানিয়েছে, নৌকাটিতে মোট ৭৫ জন আরোহী ছিলেন, যার মধ্যে ২৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত আইওএমের বিবৃতিতে জানানো হয়, উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হয়েছে। সংস্থাটি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ পোস্ট করে বলেছে, সমুদ্রপথে শরণার্থী ও অভিবাসীদের এ ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঠেকাতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।
আইওএমের তথ্য অনুযায়ী, শুধু ২০২৪ সালেই ভূমধ্যসাগরে অন্তত ২ হাজার ৪৫২ শরণার্থী ও অভিবাসী মারা গেছে কিংবা নিখোঁজ হয়েছে। আফ্রিকা থেকে ইউরোপের উদ্দেশে সমুদ্রপথে যাত্রা বিশ্বের অন্যতম প্রাণঘাতী রুটে পরিণত হয়েছে।
লিবিয়ার ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, ২০১১ সালে মুয়াম্মার গাদ্দাফি ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর দেশটি ইউরোপগামী শরণার্থী ও অভিবাসীদের একটি প্রধান ট্রানজিট রুটে পরিণত হয়। বর্তমানে দেশটিতে প্রায় ৮ লাখ ৬৭ হাজার অভিবাসী অবস্থান করছে। গাদ্দাফির শাসনামলে আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসীরা লিবিয়ায় কাজ করার সুযোগ পেতেন। কিন্তু তার পতনের পর থেকে দেশটি প্রতিদ্বন্দ্বী মিলিশিয়াদের সংঘাতে জর্জরিত হয়ে পড়ে।
এটি ভূমধ্যসাগর পাড়ি দেওয়া শরণার্থীদের সর্বশেষ ভয়াবহ দুর্ঘটনা। এর আগে আগস্টে ইতালির লাম্পেদুসা দ্বীপের কাছে দুটি নৌকা ডুবে অন্তত ২৭ জন মারা যান। জুন মাসে লিবিয়া উপকূলে দুটি জাহাজডুবিতে অন্তত ৬০ জন প্রাণ হারান বা নিখোঁজ হন।
অধিকার সংগঠন ও জাতিসংঘ সংস্থাগুলোর দাবি, লিবিয়ায় শরণার্থী ও অভিবাসীরা নিয়মিত নির্যাতন, ধর্ষণ ও চাঁদাবাজির শিকার হচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন অভিবাসন ঠেকাতে লিবিয়ার কোস্টগার্ডকে অর্থ ও সরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করলেও ওই বাহিনীর সঙ্গে নির্যাতন ও অপরাধে জড়িত মিলিশিয়াদের সম্পর্ক থাকার অভিযোগ রয়েছে।
মানবাধিকার সংগঠনগুলোর অভিযোগ, ইউরোপীয় দেশগুলো ধাপে ধাপে রাষ্ট্রীয় উদ্ধার অভিযান বন্ধ করে দেওয়ায় সমুদ্রপথ আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। একইসঙ্গে উদ্ধার কাজে নিয়োজিত দাতব্য সংস্থাগুলোও বিভিন্ন রাষ্ট্রের দমনমূলক পদক্ষেপের শিকার হচ্ছে। ফলে সংঘাত ও নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা বহু মানুষ লিবিয়ায় আটকা পড়ে অমানবিক পরিবেশে বন্দিশিবিরে জীবন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে।