বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক মো. সবুর খানের বিরুদ্ধে বিএ পাশের মিথ্যা তথ্য দিয়ে বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতির পদ বাগিয়ে নেয়ার ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।
বাইশারী এলাকার বাসিন্দা মামুন ফরাজী বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মিথ্যে তথ্য দেয়ায় ঘটনায় প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিদ্যালয়ের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে বরিশাল শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর মো. রফিকুর ইসলাম খান স্বাক্ষরিত এক পত্রে বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কমিটির অনুমোদন দেয়া হয়।
ওই কমিটিতে বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সম্পাদক ও বাইশারী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. সবুর খানকে সভাপতি, মো. হুমায়ুন কবিরকে অভিভাবক সদস্য, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. ফিরোজ আহম্মেদকে শিক্ষক প্রতিনিধি সদস্য ও প্রধানশিক্ষক মো. ফকরুল আলমকে পদাধিকার বলে সদস্য সচিব করা হয়।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষে নীতিমালা অনুযায়ী স্কুল কমিটির সভাপতি হতে হলে তাকে কমপক্ষে স্নাতক পাশ হতে হবে। বানারীপাড়ার বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কমিটি গঠনের সময়ে দেয়া জীবন বৃত্তান্তে সবুর খান নিজেকে বিএ পাশ উল্লেখ করেন। কিন্তু এর অনুকূলে তিনি তার শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদের কোনো কপি জমা দেননি। সেই অনুযায়ী বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক সবুর খানের নাম তালিকার এক নম্বরে রেখে সুপারিশ বোর্ডে পাঠিয়েছেন।
অভিযোগকারী বাইশারী এলাকার বাসিন্দা মামুন ফরাজী বলেন, বাইশরী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি বিএনপি নেতা সবুর খান তার বায়োডাটায় শিক্ষাগত যোগ্যতা হিসেবে বিএ পাশ উল্লেখ করেছেন। মূলত তিনি বিএ পাস নন।
বিএনপির নেতা হওয়ায় তিনি দলীয় প্রভাব খাটিয়ে মিথ্যে তথ্য দিয়ে প্রায় দেড়শ' বছরের ঐতিহ্যবাহী বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির পদ বাগিয়ে নিয়েছেন। তাই এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তার বিএ পাশের তথ্য যাচাইয়ের জন্য বোর্ডের নির্ধারিত ফি জমা দিয়ে আবেদন করেছি। কিন্তু আবেদন করার প্রায় এক মাস অতিবাহিত হলেও বোর্ড কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
এ ব্যাপারে বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধানশিক্ষক মো. ফকরুল আলম বলেন, বিদ্যালয়ের এডহক কমিটি গঠনের জন্য চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে স্থানীয় বিএনপির নেতারা সভাপতি পদে সবুর খানের নাম প্রস্তাব করেন। ফলে তাকে এক নম্বরে রেখে তিনজন প্রার্থীর তালিকা ইউএনও অফিসে জমা দেয়া হয়। তালিকার সাথে সবুর খানের দেয়া একটি জীবন বৃত্তান্ত দেওয়া হয়েছে। এতে তিনি বিএ পাস বলে উল্লেখ করেন। তবে সময় স্বল্পতা এবং ব্যস্ততার কারণে তার দেয়া তথ্য যাচাই বাছাই করার সুযোগ আমাদের হয়নি। পরে শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ সবুর খানকে কমিটির সভাপতি করে আমাদের চিঠি দিয়েছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের বিদ্যালয় পরিদর্শক প্রফেসর মো. রফিকুর ইসলাম খান বলেন, স্থানীয় মামুন ফরাজীর অভিযোগের ভিত্তিতে সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শককে তদন্তের জন্য নিদের্শ দেয়া হয়েছে। দ্রুত সময়ে মধ্যে তাকে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো. ইউনুস আলী সিদ্দিকী বলেন, বাইশারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতির বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত চলছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কমিটি বাতিলসহ মিথ্যা তথ্য দেয়ার অপরাধে তার বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।