ধান উৎপাদনে তাপমাত্রা বাড়ার শঙ্কা

এফএনএস | প্রকাশ: ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৬:৫৪ পিএম
ধান উৎপাদনে তাপমাত্রা বাড়ার শঙ্কা

বাংলাদেশে ধান শুধু প্রধান খাদ্যশস্যই নয়, গ্রামীণ জীবনের প্রাণও বটে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত দিন দিন ধান উৎপাদনে বড় হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, ধানগাছ সাধারণত উষ্ণ আবহাওয়ায় ভালো জন্মালেও অতিরিক্ত তাপ বিশেষ করে রাতের উচ্চ তাপমাত্রা ধানের ফলন ও গুণমানের জন্য ক্ষতিকর। আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ইরি) ২৪ বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানিয়েছে, রাতের গড় তাপমাত্রা প্রতি ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেলে ফলন ১০ শতাংশ কমে যায়। বাংলাদেশের বাস্তবতা আরও জটিল। ২০২১ সালে হিটশকের কারণে প্রায় ৪৮ লাখ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বোরো মৌসুমে দেশের তাপমাত্রা অনেক সময় ৪০ ডিগ্রির বেশি ছুঁয়ে যায়, যা ফলনের জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ধান গবেষকদের মতে, ধানের জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা ২৫ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর বেশি হলে ফুল ফোটা ও দানা গঠনের প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়, ফলে চিটা দানা বাড়ে, ফলন কমে এবং পুষ্টিগুণও নষ্ট হয়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির আরেকটি বড় প্রভাব হলো ধানের পুষ্টিগুণ হ্রাস। উচ্চ তাপে গাছকে ঠাণ্ডা রাখতে প্রচুর পানি বের হয়ে যায়। শীষ ও পাতায় পানিশূন্যতার কারণে দানা পূর্ণতা হারায়। এর ফলে শুধু উৎপাদন নয়, খাদ্যমানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের গবেষকেরা দেখিয়েছেন, তাপমাত্রার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত জিন ধানের মান ও ফলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) ২০১২ সাল থেকে উচ্চ তাপ সহিষ্ণু ধান উদ্ভাবনের চেষ্টা করছে। বিরি ধান-২৮ ও এন২২-এর সংকরায়নের মাধ্যমে একটি অগ্রগামী সারি তৈরি হয়েছে, যা কিছুটা উচ্চ তাপ সহ্য করতে পারে। তবে এখনো বাণিজ্যিকভাবে সফল কোনো জাত পাওয়া যায়নি। ব্রির বিজ্ঞানীরা মনে করছেন, সাফল্য পেতে আরও কয়েক বছর সময় লাগতে পারে। অন্যদিকে চীনা গবেষকদের জিন শনাক্তকরণের সাফল্য ভবিষ্যতে বিশ্বজুড়ে তাপ সহিষ্ণু জাত উদ্ভাবনে নতুন দিগন্ত খুলে দিতে পারে। বাংলাদেশের কৃষির জন্য এই গবেষণাগুলো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, জনসংখ্যা বাড়ছে, জমি কমছে, অথচ ধান উৎপাদন বজায় রাখা অপরিহার্য। ধান উৎপাদনে অনিশ্চয়তা মানে খাদ্য নিরাপত্তায় সরাসরি হুমকি। এখনই প্রয়োজন সমন্বিত উদ্যোগ। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশাপাশি নীতি নির্ধারকদের উচিত নতুন জাত উদ্ভাবন, কৃষক পর্যায়ে সেগুলো ছড়িয়ে দেওয়া এবং সেচব্যবস্থা ও পানি ব্যবস্থাপনায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক গবেষণা সহযোগিতা জোরদার করতে হবে। ধান শুধু খাদ্য নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, ইতিহাস ও অর্থনীতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাপ সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন এখন সময়ের দাবি।