এমপিদের বিলাসবহুল গাড়ি কেনা ঠেকাতে রাস্তায় তিমুর-লেস্তের তরুণরা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক | প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:৪১ এএম
এমপিদের বিলাসবহুল গাড়ি কেনা ঠেকাতে রাস্তায় তিমুর-লেস্তের তরুণরা

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দরিদ্রতম দেশগুলোর একটি তিমুর-লেস্তেতে এমপিদের জন্য নতুন বিলাসবহুল গাড়ি কেনার সিদ্ধান্ত জনরোষের মুখে পড়ে বাতিল করতে বাধ্য হয়েছে সরকার। রাজধানী দিলিতে কয়েক হাজার মানুষের বিক্ষোভ, টায়ার পোড়ানো, সরকারি গাড়িতে আগুন দেওয়া ও পুলিশের টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপের পর মঙ্গলবার পার্লামেন্ট সর্বসম্মতভাবে এই পরিকল্পনা বাতিল করে। তবে বুধবারও অন্তত দুই হাজার মানুষ রাজপথে বিক্ষোভে যোগ দেন। বিবিসি ও এএফপির খবরে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রথমদিকে আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দু ছিল নতুন গাড়ি কেনার পরিকল্পনা। সরকার প্রতিটি এমপিকে নতুন টয়োটা প্রাডো এসইউভি দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। কিন্তু সমালোচকরা জানাচ্ছেন, এমপিদের বর্তমানে ব্যবহৃত গাড়িগুলো এখনো ভালো অবস্থায় রয়েছে। পাশাপাশি, এমপিদের বার্ষিক বেতন ৩৬ হাজার ডলার—যা দেশের গড় আয়ের দশ গুণেরও বেশি। এই প্রেক্ষাপটে জনগণ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক সেজারিও সিজার বিবিসিকে বলেন, "শিক্ষা, পানি ও স্যানিটেশনের মতো মৌলিক সুযোগ-সুবিধার অভাব থাকা সত্ত্বেও এমপিরা নিজেদের জন্য আইন বানাচ্ছেন। এটি চরম অন্যায়।”

বিক্ষোভের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, তিনি টিয়ার গ্যাসে আহত হয়েছেন। তার ক্ষোভ—“জনগণ ভোগান্তিতে থাকলেও এমপিরা কাজের জন্য বিলাসবহুল গাড়ি কিনতে চান।” অন্যদিকে, আন্দোলনে অংশ নেওয়া ৪২ বছর বয়সী ত্রিনিতো গাইও এএফপিকে বলেন, “গুজব আছে গাড়িগুলো ইতিমধ্যে আসছে। তাই আমরা রাজপথে নেমেছি, যেন আমাদের ট্যাক্সের টাকা ভুলভাবে খরচ না হয়।”

এবার বিক্ষোভ শুধু গাড়ি কেনার বিরুদ্ধেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। সাবেক এমপিদের জন্য আজীবন ভাতা বাতিলের দাবিও তুলেছেন প্রতিবাদকারীরা। জাতিসংঘের হিসাবে তিমুর-লেস্তের ৭০ শতাংশ মানুষ ৩৫ বছরের কম বয়সী। তরুণপ্রধান এই জনগোষ্ঠী মৌলিক চাহিদার অভাবে দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভ পোষণ করছে।

দেশটির সাবেক মন্ত্রী ও ইনস্টিটিউট অব পলিটিক্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের সভাপতি ফিদেলিস লেইতে মাগালহায়েস বিবিসিকে বলেন, “মানুষ এখন প্রতিবাদকে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার অংশ হিসেবেই দেখে। দিলির জীবন স্বাভাবিকভাবে চলছে। বড় আন্দোলন হলেও সমাজে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়নি।”

এশিয়ার বিভিন্ন দেশে একই সময়ে অনুরূপ বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। নেপালে সম্প্রতি তরুণদের নেতৃত্বে ব্যাপক বিক্ষোভে ডজনখানেক মানুষ নিহত হয়েছে। আর গত আগস্টে ইন্দোনেশিয়ায় জীবনযাত্রার ব্যয় ও রাজনৈতিক অভিজাতদের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়, যা আরও তীব্র আকার নেয় এক মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশের গাড়ির ধাক্কায় নিহত হওয়ার পর।