পাকিস্তান ও সৌদি আরব বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) একটি নতুন কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যা আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। চুক্তি অনুযায়ী, কোনো একটি দেশের ওপর আক্রমণ হলে সেটিকে উভয় দেশের ওপর ‘আগ্রাসন’ হিসেবে গণ্য করা হবে। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ।
সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিতা শক্তিশালী করা এবং যেকোনো আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যৌথ প্রতিরোধ নিশ্চিত করা হবে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘প্রায় আট দশকের ঐতিহাসিক অংশীদারিত্ব, ভ্রাতৃত্ব ও ইসলামি সংহতির বন্ধন, অভিন্ন কৌশলগত স্বার্থ এবং ঘনিষ্ঠ প্রতিরক্ষা সহযোগিতা’ এই চুক্তির ভিত্তি।
চুক্তিটি এমন এক সময়ে স্বাক্ষরিত হলো, যখন মধ্যপ্রাচ্যের উষ্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং উপসাগরীয় দেশগুলোতে নিরাপত্তা সংক্রান্ত উদ্বেগ রয়েছে। বিশেষ করে, সৌদি আরবের প্রতিবেশী কাতারে হামাস নেতাদের লক্ষ্য করে ইসরাইলের সাম্প্রতিক হামলার প্রেক্ষাপটে চুক্তিটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
পাকিস্তানের জন্যও চুক্তি গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটির অর্থনীতি দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবের সমর্থনের ওপর নির্ভরশীল। প্রায় ২৫ লাখ পাকিস্তানি নাগরিক বর্তমানে সৌদি আরবে বসবাস ও কর্মরত রয়েছে। এছাড়া সৌদি আরব পাকিস্তানের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা অংশীদারও বটে।
চুক্তির খবর প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও এ বিষয়ে নজর রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল বলেন, ‘সৌদি আরব ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে কৌশলগত সম্পর্ক রয়েছে, এখন তা আনুষ্ঠানিক হয়েছে। আমরা বিষয়টির সম্ভাব্য প্রভাব এবং আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর প্রভাব নিরীক্ষা চালিয়ে যাব।’ সৌদি একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আল জাজিরাকে জানিয়েছেন, নয়াদিল্লির সঙ্গে সৌদি আরবের সম্পর্ক আগের চেয়ে শক্তিশালী এবং তা বজায় রাখা হবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই চুক্তি উপসাগরীয় অঞ্চলের রাজনৈতিক ভারসাম্য এবং পাকিস্তান-ভারত দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে নতুন ধরনের কূটনৈতিক প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে চলতি বছরের মে মাসে পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সংঘটিত চার দিনের যুদ্ধে অন্তত ৭০ জন নিহত হওয়ার পর এটি আরও সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।