সাবেক ডিএমপি কমিশনারসহ পাঁচজনের বিচার শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৫:৫৭ পিএম
সাবেক ডিএমপি কমিশনারসহ পাঁচজনের বিচার শুরু

ঢাকার রামপুরায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় গুলি চালিয়ে এক যুবককে আহত ও দু’জনকে হত্যার অভিযোগে সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে পলাতক চার আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। একই সঙ্গে মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য আগামী ১৬ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, গত বছরের ১৯ জুলাই রামপুরার বনশ্রী এলাকায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নির্মাণাধীন একটি ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা আমির হোসেনকে লক্ষ্য করে পুলিশের পক্ষ থেকে ছয়টি গুলি ছোড়া হয়। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। দীর্ঘ চিকিৎসার পর তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। একই দিনে ওই এলাকায় পুলিশের গুলিতে নাদিম ও মায়া ইসলাম নিহত হন এবং মায়ার ছয় বছর বয়সী নাতি বাসিত খান মুসা গুলিবিদ্ধ হয়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আমির হোসেন জানান, সেদিন নামাজ শেষে বাসায় ফেরার পথে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও গুলির মুখে পড়েন তিনি। প্রাণ বাঁচাতে দৌড়ে চারতলা একটি ভবনের ছাদে উঠলে পুলিশ তাকে অনুসরণ করে। একপর্যায়ে নিচে নামার জন্য চাপ দিতে দিতে পুলিশ তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়। গুলি তার দুই পায়ে লাগে এবং তিনি নির্মাণাধীন ভবনের তৃতীয় তলায় পড়ে যান। স্থানীয়দের সহায়তায় দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টা পর তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

এই মামলায় অভিযুক্তরা হলেন—পলাতক সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান, ডিএমপির খিলগাঁও জোনের সাবেক অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মো. রাশেদুল ইসলাম, রামপুরা থানার সাবেক ওসি মো. মশিউর রহমান, এসআই তরিকুল ইসলাম ভূইয়া এবং গ্রেপ্তারকৃত সাবেক এএসআই চঞ্চল চন্দ্র সরকার।

এর আগে গত ৩১ জুলাই চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। পরে ৭ আগস্ট প্রসিকিউটর ফারুক আহাম্মদ আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফর্মাল চার্জ) জমা দেন। ২৫ আগস্ট পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয় এবং ১ সেপ্টেম্বর তাদের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করা হয়।

প্রসিকিউশনের পক্ষ থেকে আদালতে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। পলাতক আসামিদের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন, আর গ্রেপ্তার আসামি চঞ্চল সরকারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী সারওয়ার জাহান নিপ্পন।

ট্রাইব্যুনালের আদেশের পর রাষ্ট্রপক্ষ বলেছে, মানবতাবিরোধী এই হত্যাকাণ্ড ও গুলিবর্ষণের মাধ্যমে মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন ঘটেছে। এ মামলার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে দায়ীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে