রোডম্যাপ অনুযায়ী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ওই লক্ষ্যে আগামী মাসের মধ্যে যাবতীয় প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সম্পন্ন করা চেষ্টা চলছে। তার মধ্যে নির্বাচনী দ্রব্যাদির মধ্যে ব্যালট বাক্স, লক, ঢাকনা, গানি ব্যাগ, সিল, বিভিন্ন প্রকার সিল, ফরম, স্ট্যাম্প প্যাড, প্যাকেট ইত্যাদির উল্লেখ রয়েছে। আর নির্বাচনের জন্য মজুদ করা দ্রব্যাদি পরীক্ষা ও জেলা-উপজেলা নির্বাচন অফিসারদের চাহিদা নিরূপণ করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। ইতিমধ্যে কেনাকাটার জন্য উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বেশির ভাগ পণ্য কেনাকাটা সম্পন্ন হয়েছে। গালা, সিল, তালাসহ ছয় ধরনের সরঞ্জাম ইসিতে মজুদ করা হচ্ছে। আর চলতি মাসের মধ্যে কেনাকাটার বাকি কাজগুলোও শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচন কমিশন (ইসি) সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আসন্ন ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে এখন পর্যন্ত মোট ভোটার ১২ কোটি ৬১ লাখ ৬১ হাজার ২০১ জন। তবে ৩১ অক্টোবর ইসির সম্পূরক আরেকটি তালিকা অনুযায়ী মোট ভোটার ১৩ কোটিতে দাঁড়াতে পারে। গড়ে তিন হাজার ভোটারের জন্য একটি কেন্দ্র ধরে মোট ৪২ হাজার ৬১৮টি সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়েছে। আর পুরুষদের জন্য ৬০০ জন ধরে এক লাখ ১৪ হাজার ৯৩৯টি ভোটকক্ষ এবং নারীদের জন্য ৫০০ জন ধরে এক লাখ ২৯ হাজার ১০৭টি কক্ষের সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে। মোট ভোটকক্ষ দাঁড়াচ্ছে দুই লাখ ৪৪ হাজার ৪৬টি। ওসব ভোটকক্ষ সাজাতে ও গোপনীয়তা রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কেনাকাটায় ইসি পরিকল্পনা মাফিক আগাচ্ছে।
সূত্র জানায়, কয়েক মাস আগে থেকে দরপত্র প্রকাশের মাধ্যমে নির্বাচনী সরঞ্জাম সংগ্রহ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে আট ধরনের পণ্য কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়। ইসির কার্যাদেশ অনুযায়ী ইতিমধ্যে ছয় ধরনের সরঞ্জাম সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের মাধ্যমে ইসিতে পৌঁছাচ্ছে। সেগুলো মজুদ রাখা হচ্ছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে। তবে এখনো একটি পণ্যের ক্রয়াদেশ হয়নি। আর পিতলের সিলমোহর (ব্রাস সিল) ক্রয়ে তিনবার টেন্ডার আহ্বান করতে হলেও মানসম্পন্ন পণ্য না হওয়ায় আগের দুবার ব্রাস সিল টেন্ডার বাতিল করা হয়। তাছাড়া জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)অমোচনীয় কালি ও স্ট্যাম্প প্যাড দেবে। জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে প্রয়োজন হয় মোট ২৩ ধরনের সরঞ্জাম। সেগুলোর বেশির ভাগ ইসি সরবরাহ করে। আর ভোটের মনিহারি দ্রব্য হিসেবে সুই-সুতা, ছুরি, মোমবাতি, দিয়াশলাই, আঠা, কাগজ-কলম ও পাস্টিকের পাত রিটার্নিং কর্মকর্তারা স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করে থাকে। ওসব সরঞ্জাম কেনাকাটার কাজ ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে শেষ করা হবে।
সূত্র আরো জানায়, ইসি থেকে যে আটটি নির্বাচনী সরঞ্জামের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে ছয় ধরনের মালপত্র সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন ও সরবরাহ শুরু করেছে। এর মধ্যে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের লকের (তালা) চাহিদা ৫০ লাখ পিসের বিপরীতে চার লাখ ৮০ হাজার সরবরাহ হয়েছে। ২৩ হাজার কেজি লাল গালার মধ্যে সাত হাজার কেজি এসেছে। দাপ্তরিক সিল (রাবারের) আট লাখ ৪০ হাজারের মধ্যে পাঁচ লাখ ইসির হাতে এসেছে। মার্কিং সিল (রাবারের) লাগবে ১৭ লাখ ৫০ হাজার, যার মধ্যে এক লাখ ৬০ হাজার এসেছে। তাছাড়া বড় হেসিয়ান ব্যাগের চাহিদা ছিল ৭০ হাজার এবং ছোট হেসিয়ান ব্যাগের চাহিদা ছিল এক লাখ ১৫ হাজার। ওই দুটি পণ্যের চাহিদার পুরোটাই ইসি বুঝে পেয়েছে। তবে এখনো শুরু হয়নি এক লাখ ১৫ হাজার পিস ব্রাস সিল সরবরাহ। তাছাড়া শিগগিরই দেয়ার কথা রয়েছে ভোটকেন্দ্রে দ্রব্যাদি বহনের জন্য এক লাখ ১৫ হাজার চটের থলির (গানি ব্যাগ) ক্রয়াদেশ। নির্বাচনের সব ভোটকক্ষে ভোট গ্রহণের জন্য তিন লাখের মতো স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সের প্রয়োজন হবে। তবে তা আগে থেকেই ইসির হাতে থাকায় নতুন করে স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স কেনার প্রয়োজন হচ্ছে না।
এদিকে এ প্রসঙ্গে ইসির অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী নেওয়াজ জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে ৫৬ দিন সময় দেয়া হয়েছে। আশা করা যায় ওই সময়ের মধ্যে সব মালপত্র হাতে পাওয়া যাবে। প্রতিটি পণ্যের জন্য চাহিদার আলোকে প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে নমুনা নেয়া হয়েছিল। প্রতিষ্ঠানগুলো যখনই মালপত্র দিচ্ছে, তখনই তা ওই নমুনা সঙ্গে মিলিয়ে নেয়া হচ্ছে।