সরু সড়ক ও অতিরিক্ত বাঁকের কারণে মরণ ফাঁদে পরিনত হয়েছে খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়ক। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁকের কারণে প্রতিনিয়ত ঘটছে ছোট বড় দুর্ঘটনা। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটকবাহী যানবাহনের চাপ বাড়ায় নিরাপদ যাতায়াতের জন্য সড়ক প্রশস্ত ও বাঁক সরলীকরণের দাবি জানিয়েছে চালক ও যাত্রীরা। খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়ক প্রশস্তকরণে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্প নিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। তবে কাজ এখনো শুরু হয় নি।
খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা ১৮কিলোমিটারে সড়কে বাঁক রয়েছে ৫২টি। ভৌগলিক কারণে খাগড়াছড়ির অধিকাংশ সড়ক আঁকা-বাঁকা। ১৯৮০ সালে নিমির্ত এসব সড়ক তুলোনামূলক প্রশস্ত কম হওয়ায় যান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। উঁচু নিচু সরু সড়কে ট্রাক,বাস ও পর্যটকবাহী যানবাহন চলাচলে ভোগান্তিতে পরে চালক ও যাত্রীরা। সাজেকগামী পর্যটকবাহী যানবাহন সড়কে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করেছে। সড়কে যানবাহনের চাপ বাড়ায় বেড়েছে ভোগান্তিও। যার কারণে আঁকা-বাঁকা সরু সড়কে যাতায়াতে সময় লাগে বেশি। সড়ক ছোট হওয়ায় ভারী যানবাহন চলাচলের বিঘ্নতা তৈরি হয়। খাগড়াছড়ি সদর কদমতলী থেকেই এ সড়কের বাঁক শুরু। সরু সড়কের কারণে যানবাহন চলাচলে প্রায় দুর্ঘটনার শিকার হয়। দুর্ঘটনা রোধে সড়ক প্রশস্ত করণ ও বাঁক কমানোর দাবি জানিয়েছে চালক ও যাত্রীরা।
পথচারী গণেশ ত্রিপুরা বলেন, খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা সড়ক খুব ছোট। আমরা যারা রাস্তার পাশ দিয়ে চলাফেরা করতে হয় তখন আতঙ্কে থাকি। কখন গাড়ি এসে মেরে দেয়। একই কথা জানালেন খাগড়াছড়ি শহরের বাসিন্দা আসমা আক্তার থাকেন কদমতলীতে। ছেলেকে নিয়ে প্রতিদিন স্কুলে যেতে হয় বলে বের হন রাস্তায়। পুলিশ সুপার বাসভবন সংলগ্ন দীঘিনালা সড়কটি। ত্রিমুখী রাস্তা, ভয়ংকর বাঁক, এখানে প্রায় দুর্ঘটনা ঘটে। দীঘিনালা সড়কটি ছোট হওয়ার কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে। গাড়ি উল্টে খাদে পড়ে যায় বেশির ভাগ সময়। রাস্তাটি দ্রুত বড় করা হলে সবার জন্যই নিরাপদ হতো।
প্রতিভা ত্রিপুরা জানান, বাচ্চা'কে রাস্তার পাশ দিয়ে স্কুলে নিয়ে আসা-যাওয়ার সময় ভয়ে থাকি। রাস্তার প্রশস্ত ছোট। দুইটা গাড়ি আসলে সাইড দিতে গিয়ে রাস্তার বাইরে নেমে যেতে হয়। রাস্তার পাশে হাঁটার রাস্তাও নাই। যদি রাস্তাটা প্রশস্ত বাড়ানে হয় তাহলে রাস্তার পাশ ধরে আমরা সাধারণ পথচারীরা হাঁটতে পারতাম। বাচ্চাদের নিয়ে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে একটু স্বস্তি পেতাম।
জীপগাড়ি চালক মোঃ ইব্রাহীম মিঞা বলেন, রাস্তাটি অত্যন্ত ছোট। বড় কোন গাড়ি আসলে রাস্তা থেকে নেমে যেতে হয়। এছাড়া একটা গাড়িকে ক্রস করার মতো রাস্তায় জায়গা নেই। বাঁক ও উঁচুনিচু সড়কের কারণে বাঁশ ও কাঠ বোঝায় ট্রাক প্রায় দুর্ঘটনার কবলে পড়ে । রাস্তাটি যদি ৬ ফুট প্রশস্ত বাড়ানো করা হয় তাহলে ভালো হয়।
জেলা মহাসড়কের ১৮ ফুট প্রশস্ত থাকার কথা থাকলেও রয়েছে ১০ থেকে ১২ ফুট উঁচু নিচু পাহাড়ি সড়কে দুর্ঘটনা রোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি পরিবহন নেতাদের।
খাগড়াছড়ি সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক রোকন উদ্দিন বলেন, খাগড়াছড়িতে এখন গাড়ি চাপ বেড়েছে। এই সড়কটি দিয়ে অনেক পর্যটক সাজেক এ যাতায়াত করে। সড়কে অতিরিক্ত বাঁকের কারণে প্রায় সময় দুর্ঘটনা ঘটছে। রাস্তা প্রশস্ত করলে বাঁকের পরিমাণ কমে আসবে। দুর্ঘটনাও কমে আসবে অনেকাংশে।
দুর্ঘটনা রোধে জেলা সদরের খাগড়াপুর থেকে দীঘিনালা বাস স্টেশন পর্যন্ত ১৮ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণের প্রকল্প নিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ। ইতোমধ্যে প্রকল্পের কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। ২০২৬ সালের মার্চে প্রকল্পটি কাজ শেষ হওয়ার কথা জানিয়েছে সড়ক ও জনপদ বিভাগ।
খাগড়াছড়ি সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাকসুদুর রহমান জানান, খাগড়াছড়ি - দীঘিনালা রাস্তাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। রাস্তাটি দিয়ে ছোট-বড় যানবাহনের পাশাপাশি অনেক পর্যটকবাহী যানও চলাচল করে। ইতোমধ্যে আমরা সড়কটি সম্প্রসারণে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। রাস্তার দুই পাশে প্রশস্ত করে মোট রাস্তার প্রশস্ত ১৮ ফুট করা হবে। এতে যানবাহন চলাচলে সাময়িক সুবিধা হতে পারে। খাগড়াছড়ি-দীঘিনালা প্রশস্তকরণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৪ কোটি ৬২ লক্ষ টাকা ।