দরজা বন্ধ করে বেঁধে ফেলা হয় খাটের পায়ার সাথে। মুখে আওয়াজ বন্ধ করতে ওড়না দিয়ে বাঁধা হয়। এরপর শুরু হয় অমানুষকি নির্যাতন। পিটাতে পিটাতে একপর্যায়ে মাটিতে পড়ে গেলে গলা পাড়া দিয়ে চেপে ধরা হয়। এখানেই শেষ নয়। অমানুষকি নির্যাতনের এ আওয়াজ শুনানো হয় গৃহবধুর পিতাকে। সংবাদ পেয়ে পুলিশের সহযোগতিায় উদ্ধার করা হয় সেই নির্যাতিতাকে। অনেকটা অজ্ঞান অবস্থায় র্ভতি করা হয় উপজলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটে নোয়াখালীর হাতিয়ায় বুড়িরচর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের রেহানিয়া গ্রামে।
উপজলো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মহিলা ওয়াডে ২৪ নং বেডে ভর্তি আছেন নির্যাতিতা ফারজানা বেগম। কথা হয় তার সাথে। লোমর্হষক ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে ফারজানা বলেন, সাত বছর আগে আবদুল গনির সাথে তার বিয়ে হয়। দুইটি পুত্র সন্তান আছে। বিয়ের পর থেকে ধাপে ধাপে বাপের বাড়ী থেকে র্স্বণালংকার নগদ অর্থ ঘর তৈরির জন্য গাছ ও আসবাবপত্র হাড়িপাতিল অনেক কিছু স্বামীকে দেওয়া হয়। কিন্তু তার চাহিদা মেটে না। চাওয়া হয় আরো টাকা। যা বাবার পক্ষে সম্ভব হয় না। বিভিন্ন অজুহাতে আমাকে নির্যাতন করে বাপের বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হত। এই ফাঁকে আমার স্বামী বাড়ীর পাশের তার এক বিধবা মামাতো বোনের সাথে পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। স্বামীর অনৈতিক কাজে বাঁধা দিলে সে আমার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বেদম মারধর করত।
ঘটনার দিন আবদুল গনি নৌকা থেকে এসে পাশের বাড়ীর মামাতো বোনের বাড়ি চলে যায়। আমি তাতে বাঁধাদান করলে সে ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে ইচ্ছেমত মারধর করে বাজারে চলে যায়। রাতে বাজার থেকে এসে ঘরে ডেকে নিয়ে যায়। কিছু বুঝে উঠার আগে তার মা বাবা ভাই ঘরে ঢ়ুকে দরজা জানালা বন্ধ করে দেয়। পরে আমাকে খাটের সাথে বেঁঁধে মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে বেদম মারপিট করতে থাকে। একপর্যায়ে আমার বুকের উপর পা দিয়ে চেপে ধরে নির্যাতনের আওয়াজ মুঠোফোনে শুনানো হয় আমার বাবাকে। এ সময় আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। পরে ঘুম ভাঙলে দেখি আমি হাসপাতালে।
এ বিষয়ে ফারজানার পিতা মো: হানিফ বলেন, বিয়ের পর যৌতুকের জন্য নানাভাবে আমার মেয়েকে নির্যাতন করত। মেয়ের শান্তির জন্য বিভিন্ন সময়ে স্বর্ণ নগদ টাকা ও ঘরের দরকারি জিনিসপত্র পাঠালেও নির্যাতন যেন থামছেনা। সে আমার মেয়েকে মারছে আর চিৎকারের আওয়াজ মোবাইল করে আমাকে শুনাচ্ছে। আমি যেন তাদের বাড়ী না যায় সে জন্য হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয় আমাকে। পরে থানায় অভিযোগ দিলে আমার মেয়েকে এস আই প্রতিক পাল গিয়ে রাত দশটার সময় উদ্ধার করে হাতিয়া হাসপাতালে ভর্তি করে।
এই বিষয়ে বার বার ফারজানার স্বামীর সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তার নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। কথা হয় পাশবর্তী সূর্যমূখী মাছ বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আলাউদ্দিনের সাথে। তিনি বলেন, পারজানার স্বামীর সাথে পারিবারিক কলহ চলে আসছে অনেক দিন থেকে। শনিবার একটি শালিশ বৈঠকের সময় নির্ধারন ছিল। কিন্তু হঠাৎ করে বৃহস্পতিবার রাতে মেয়ের বাবা মোবাইলে করে তার মেয়েকে পিটানো হচ্ছে বলে জানান। এই বিষয়ে তিনি সহযোগিতা চান। কিন্তু অনেক রাত হওয়ায় পারজানার শশুর বাড়ি যাওয়া যায়নি। পরে শুনেছি পুলিশ এসে ফারাজানাকে আহত অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে গেছেন। ফারজানার স্বামী আব্দুল গনি মাছ শিকারে সাগরে চলে যাওয়ায় তার সাথে কথা বলা যায়নি।
হাতিয়া থানার উপ-পরিদর্শক প্রতিক পাল জানান, গৃহ্ধুকে নির্যাতন করে ঘরে বন্ধি করে রাখা হয়েছে এধরেন একটি অভিযোগ থানায় এসেছে। পরে গৃহবধুর শশুর বাড়ী থেকে রাতে তাকে অনেকটা মমূর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসা হয়েছে। এসময় বাড়ীতে পুরুষদের কেউ ছিলনা। নির্যাতনের শিকার গৃহবধুর পিতা মাতা তার চিকিৎসায় ব্যাস্ত রয়েছেন। এই বিষয়ে থানায় তারা এখনো লেখিত কোন অভিযোগ দেয়নি। লেখিত অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।