ড. হামিদুর রহমান আজাদ

সংস্কার ছাড়া নির্বাচন জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অস্বীকারের শামিল

এফএনএস (এইচ এম শহীদুল ইসলাম; সিলেট) : | প্রকাশ: ১৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:২৬ পিএম
সংস্কার ছাড়া নির্বাচন জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে অস্বীকারের শামিল

জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক এমপি ড. এ এইচ এম হামিদুর রহমান আজাদ বলেছেন, “চব্বিশের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল রাষ্ট্র ব্যবস্থার সংস্কার। সেই সংস্কার বাস্তবায়ন ছাড়া নির্বাচন আয়োজন করা মানে ওই ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানকে অস্বীকার করা।”

তিনি বলেন, জামায়াত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণে অঙ্গীকারবদ্ধ। তাই নির্বাচনের আগে ‘জুলাই সনদের আইনী ভিত্তি প্রদান, ফ্যাসিস্ট সরকারের গণহত্যার বিচার এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন’-সহ ৫ দফা দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। শুধু জামায়াত নয়, দেশের বেশিরভাগ ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলই আজ একই দাবিতে ঐক্যবদ্ধ।

ড. আজাদ আরও বলেন, “কেউ কেউ আমাদের কর্মসূচি দেখে বলেন, আমরা নাকি নির্বাচন বানচাল করতে চাই। প্রকৃতপক্ষে যারা সংস্কার মানতে চায় না, জুলাই সনদের বৈধতা স্বীকার করে না এবং পিআর পদ্ধতির নির্বাচন মানতে নারাজ- তারাই নির্বাচনের অন্তরায়।” তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, “ফ্যাসিবাদের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করেছে জুলাই বিপ্লব। তাই নতুন করে কাউকে ফ্যাসিবাদী হতে দেওয়া হবে না।”

শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টায় নগরীর রেজিস্ট্রারি মাঠে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সিলেট মহানগর জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলামের সভাপতিত্বে এবং মহানগর নায়েবে আমীর ড. নূরুল ইসলাম বাবুল ও সেক্রেটারি মোহাম্মদ শাহজাহান আলীর যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য ও সিলেট জেলা আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান।

সমাবেশ শেষে রেজিস্ট্রারি মাঠ থেকে একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি নগরীর প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে আম্বরখানা পয়েন্টে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়। এতে মহানগর, থানা ও ওয়ার্ড পর্যায়ের হাজারো নেতাকর্মী খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে যোগ দেন।

মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন- সিলেট জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ও সাবেক জৈন্তাপুর উপজেলা চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন, মহানগর সহকারী সেক্রেটারি জাহেদুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা ইসলাম উদ্দিন, সাবেক দক্ষিণ সুরমা উপজেলা চেয়ারম্যান মাওলানা লোকমান আহমদ, জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা মাসুক আহমদ, বিশ্বনাথ উপজেলা আমীর নিজাম উদ্দিন সিদ্দিকী, শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন মহানগর সভাপতি এডভোকেট জামিল আহমদ রাজু, বাংলাদেশ ল’ইয়ার্স কাউন্সিল সিলেটের সভাপতি এডভোকেট আলিম উদ্দিন ও ছাত্রশিবির মহানগর সভাপতি শাহীন আহমেদ প্রমুখ।

ড. আজাদ বলেন, “চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস কিংবা দমননীতি- এগুলো জুলাই বিপ্লবের লক্ষ্য ছিল না। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার সন্ত্রাসীদের দমন করতে ব্যর্থ হয়েছে। একটি বিশেষ দল নিজেদের সংকট কাটাতে যেকোনোভাবে ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করছে। সংস্কার কমিশনের সিদ্ধান্তও এখন সেই দলের ইচ্ছাধীন হয়ে পড়েছে।”

তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “আমরা আলোচনার মাধ্যমে সংকট সমাধানে রাজি। আবার প্রয়োজনে রাজপথেও লড়াই করব। জনমত যাচাইয়ের জন্য চাইলে গণভোট দিন, আমরা প্রস্তুত। তবে সংস্কার ছাড়া কোনো সাজানো নির্বাচন জনগণ মেনে নেবে না।”

তিনি অতীতের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “পতিত ফ্যাসিস্ট সরকার নির্বাচন ব্যবস্থাকে প্রহসনে পরিণত করেছিল। জুলুম-নিপীড়ন চালিয়ে বিরোধী দলগুলোকে দমনে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত তাদের পতন ঘটে। সেই আন্দোলনে সিলেটের শহীদ সাংবাদিক এটিএম তুরাব ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র রুদ্র সেন জীবন দিয়েছেন। তাই ঐতিহাসিক সেই গণঅভ্যুত্থানের আইনী ভিত্তি জনগণের অধিকার।”

বিশেষ অতিথি মাওলানা হাবিবুর রহমান বলেন, “জুলাই সনদের আইনী স্বীকৃতি ও পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন ছাড়া গণঅভ্যুত্থানের লক্ষ্য পূরণ হবে না। ফ্যাসিস্ট শাসনের পতনের পর নতুন করে আর কাউকে ফ্যাসিবাদী হওয়ার সুযোগ দেওয়া হবে না।”

সভাপতির বক্তব্যে মহানগর আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, “জাতীয় নির্বাচনের আগে ছাত্র-জনতার রক্তের বিনিময়ে অর্জিত জুলাই বিপ্লবের চেতনা বাস্তবায়ন করতে হবে। তাই সরকারকে ৫ দফা দাবি মেনে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে, অন্যথায় জনগণ তা প্রত্যাখ্যান করবে।”

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে