সারা দেশে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, যা সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। রাজধানী ঢাকাসহ সর্বত্র এডিস মশাবাহিত এই রোগ দুটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তরা তীব্র ব্যথা ও দুর্বলতায় ভুগে দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত করছেন। অন্যদিকে, ডেঙ্গুর জটিল উপসর্গে বহু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন এবং অনেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই মারা যাচ্ছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে দেখা যায়, চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃত্যুর হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে, যার বেশিরভাগই ঢাকার বাইরের রোগী। অথচ এই জনস্বাস্থ্য সংকট মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপের ঘাটতি স্পষ্ট। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মশাবাহিত রোগের ধরন পরিবর্তিত হওয়ায় এডিস মশার প্রজনন ও জীবনচক্র নিয়ে গভীর গবেষণা জরুরি। দেশে রোগ শনাক্তকরণ ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকট; ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার উপসর্গ প্রায় একই হওয়ায় সঠিক রোগ নির্ণয় অনেক সময় সম্ভব হচ্ছে না। চিকিৎসকরা প্রায়ই উপসর্গের ভিত্তিতে চিকিৎসা দিচ্ছেন, যা বিপজ্জনক হতে পারে। জ্বর হলে দ্রুত ডেঙ্গু পরীক্ষা করানো অপরিহার্য। জনসচেতনতার অভাব ও দেরিতে হাসপাতালে পৌঁছানো মৃত্যুহার বাড়াচ্ছে। মফস্বলে রোগ নির্ণয়ের সীমাবদ্ধতা ও ভুল চিকিৎসা পরিস্থিতি জটিল করছে। তাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও সরকারি সংস্থাগুলোকে আক্রান্তের সুনির্দিষ্ট তথ্য সংগ্রহে সক্রিয় হতে হবে। সিটি করপোরেশনগুলোকে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত মশক নিধন পদ্ধতি গ্রহণ করতে হবে; শুধু ফগার নয়, উৎসস্থলে লার্ভা ধ্বংসে জোর দিতে হবে। ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা পরীক্ষা জরুরি। নাগরিকদেরও বাড়ি ও আশপাশে মশার প্রজননক্ষেত্র ধ্বংসে সচেতন হতে হবে। স্কুল, বাজার ও কর্মস্থলেও পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করতে হবে। অতীতে নিয়ন্ত্রণের দুর্বলতা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার ঘাটতির কারণেই এ রোগ মহামারি আকারে ছড়িয়েছে। এখনই শিক্ষা নিয়ে সম্মিলিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার সময়। সচেতনতা, সঠিক রোগ নির্ণয়, প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা ও কার্যকর মশা নিধনই এই সংকট মোকাবিলার একমাত্র পথ। সরকার, স্বাস্থ্য বিভাগ ও নাগরিক-সবাই মিলে কাজ করলে এই মহামারি নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হবে।