রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) শর্তসাপেক্ষে পোষ্য কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে বৃষ্টিতে ভিজে অনশন করেছেন শিক্ষার্থীরা। গতকাল শুক্রবার বিকেল থেকে আমরণ অনশনে বসেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে জোহা চত্বরে তারা এই অনশন করছেন। ১৯ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও তারা সেখানে অবস্থান করছেন। অনশনরত অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন দুই শিক্ষার্থী। তারা হলেন সমাজকর্ম বিভাগের ২০২৪-২৫ সেশনের শিক্ষার্থী ইস্পাহানি এবং আরবি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী রমজানুল মোবারক। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রবল বৃষ্টির মধ্যেও তাদের অনশনে দেখা যায়। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় এককভাবে অনশনে বসেন সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আসাদুল ইসলাম। এরপর তার সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী যোগ দেন। তারপর থেকে অনশন চালিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী সজিবুর রহমান বলেন, আমরা গতকাল রাত থেকে বসে আছি, রোদের মধ্যে পুড়ছি, বৃষ্টিতে ভিজছি, মশার কামড় খাচ্ছি। আমাদের শরীরের কী অবস্থা তা দেখার কেউ নেই। অনেকেই স্লোগান দিয়েছিল ‘রক্ত লাগলে রক্ত নে, পোষ্য কোটার কবর দে’। তারা তাদের রক্ত দেওয়া শেষ করেছে, কিন্তু আমাদের রক্ত দেওয়া এখনো শেষ হয়নি। আমরা আছি। যতক্ষণ না সমাধান হবে, আমরা থাকব। আমাদের কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল না, এখনও নেই। আমি একজন সাধারণ শিক্ষার্থী হিসেবে এখানে আছি এবং থাকব। সমাজকর্ম বিভাগের ২০২৪-২৫ সেশনের শিক্ষার্থী সানজিদা বলেন, আমার ভাইয়েরা গতকাল থেকে বৃষ্টিতে ভিজছে, রোদের মধ্যে পুড়ছে, মশার কামড়ে কষ্ট পাচ্ছে তাদের খোঁজ নেওয়ার মতো কেউ নেই। প্রশাসনের নামে এই প্রহসন আর কতদিন চলবে? যেখানে আমরা ৬০-৬৫ পেয়ে ভর্তি হতে পারি না, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানরা নামমাত্র পাশ নম্বর পেয়ে কীভাবে ভর্তি হয়? তিনি আরও বলেন, তারা তাদের সন্তানদের নিয়ে এতটা অনিরাপদ অনুভব করেন কেন? তাদের কি আত্মবিশ্বাস নেই যে সন্তানরা যোগ্যতায় ভর্তি হতে পারবে? এই ভিক্ষাবৃত্তি আর কতদিন চলবে? এখানে যারা অনশনে বসেছে, সবাই তাদের মায়ের কলিজার টুকরা। তারা যে এভাবে নিপীড়িত হচ্ছে তা দেখার কি কেউ নেই? এদিকে দুপুর ১টার দিকে অনশনরত শিক্ষার্থীদের পাশে যান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা আমিরুল ইসলাম কনক। তিনি বলেন, আমি মূলত ছাত্রদের খোঁজ নিতে এসেছি। তাদের সাথে কথা বলে বুঝতে পেরেছি, তারা খুব কষ্টে আছে। তাই আমি নিজেও তাদের সাথে অনশনে যোগ দিয়েছি। ইতোমধ্যে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়েছে, আমরা তাদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেলে পাঠিয়েছি। প্রসঙ্গত, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শর্তসাপেক্ষে পোষ্য কোটা চালু করা হয়েছে। এ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সন্তানরা যদি স্নাতক প্রথমবর্ষ ভর্তি পরীক্ষায় ন্যূনতম ৪০ নম্বর পেয়ে পাশ করে, তবে তারা ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাবেন।