জয়পুরহাটের ক্ষেতলাল উপজেলায় নিখোঁজ হওয়ার তিনদিন পর ১০ বছরের শিশুর প্রতিবেশির বাড়ির গোয়ালঘর থেকে বস্তাবন্দি লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাত ৯ টায় উপজেলার শালবন গ্রামের এ ঘটনায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। নিহত তাসনিয়া(১০) শালবন গ্রামের এরশাদের মেয়ে। তাসনিয়া বটতলীর সানরাইজ মডেল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্রী ছিলেন। তাসনিয়া নিখোঁজের তিনদিন পর শুক্রবার সন্ধ্যায় স্থানীয়রা প্রতিবেশি আঃ মান্নানের ছেলে একরামুলের বাড়ি থেকে দূর্গন্ধ বের হওয়ায় তার বাড়িতে গিয়ে গোয়ালঘরে বস্তাবন্দি মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবরদেয়।
ঘটনার খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার মানুষ ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে। উত্তেজিত জনতা এক পর্যায়ে বাড়ি ভাঙচুরের চেষ্টা চালায় এবং একরামুলের বাড়িতে থাকা দুই নারীকে অবরুদ্ধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। পরে রাত ৯টার দিকে সেনাবাহিনীর একটি টিম এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনে ওই বাড়িতে অবরুদ্ধ থাকা দুই নারীকে আটক ও শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। আটককৃতরা হলেন, উপজেলার শালবন গ্রামের একরামুলের স্ত্রী হাবিবা আকতার কুমকুম (৩০) ও একই গ্রামের আঃ রাজ্জাকের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা (৬০)।
একরামুলের স্ত্রী হাবিবা আক্তার কুমকুমের স্বীকারোক্তিতে জানাযায়, গত ১৭ সেপ্টেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় প্রতিবেশির খুলিয়ানে খেলার সময় আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী আঞ্জুয়ারা ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে তাসনিয়াকে আমাদের বাড়িতে ডেকে নিয়ে আসেন। ওই রাতে আমাকে বাড়ির দরজায় পাহারা রেখে আমার স্বামী একরামুল ও একই গ্রামের কোরবান আলীর ছেলে নাঈম ও জয়পুরহাট সদর উপজেলার সোটাহার গ্রামের আঃ রউফের ছেলে খোকন এবং অজ্ঞাত আরও একজন মিলে শিশুটিকে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে বস্তায় ভরে গোয়ালঘরে ফেলে রাখে। ওই রাতে তারা বস্তাবন্দি লাশটি বাহিরে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে ব্যার্থ হয়। তিনদিন পর বাড়ি থেকে দুর্গন্ধ বের হলে গ্রামবাসীরা বাড়ির গোয়ালঘরে তল্লাশি করে লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবরদেয়।
স্থানীয়রা জানান, শিশুটি নিখোঁজের পর থেকে আমরা বিভিন্ন ভাবে খোঁজ করি এবং আজ একরামুলের বাড়ি থেকে দূর্গন্ধ বের হলে আমরা নিশ্চিত হই এই বাড়িতে বস্তাবন্দি লাশ দেখতে পাই । তবে হত্যার কারণ আমরা বলতে পারিনা।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান নূরুল ইসলাম বলেন, নিখোঁজের পর শিশুর বাবা থানায় একটি হারানো ডাইরি করেন। এমন মর্মান্তিক ঘটনায় এলাকাবাসী শোকাহত। এ হত্যাকান্ডের সাথে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি।
ক্ষেতলাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আঃ করিম বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে সার্কেলসহ পুলিশের টিম কাজ করছে। ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। লাশটি পচন ধরায় কি ভাবে হত্যা করা হয়েছে বুঝা যাচ্ছেনা। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে গলাটিপে মারা হয়েছে। হত্যার সাথে জড়িত দুইজনকে আটক করা হয়েছে। বাকী আসামীদের গ্রেফতারের তৎপরতা চলছে। ময়নাতদন্ত শেষে পারিবারের নিকট লাশ হস্তান্তর করা হলে বিকেল ৩ টায় দাফন করা হয়।