চট্টগ্রমে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ১৪৫০ মামলা, নিষ্পত্তিতে ধীরগতি

এফএনএস (রুপম ভট্টাচার্য; চট্টগ্রাম) : | প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:৩৯ পিএম
চট্টগ্রমে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে ১৪৫০ মামলা, নিষ্পত্তিতে ধীরগতি

চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশনের সামনে ১২ হাজার বর্গফুটের কার পার্কিং। যাত্রীদের কার পার্কিং করার শর্ত অনুযায়ী এটি ইজারা দেওয়া হয়। পার্কিংটি ইজারা নিয়েছে এসএ করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর ২০২৩ সালের শেষের দিকে এ পার্কিং স্পেস নতুন করে ইজারা দেওয়ার উদ্যোগ গ্রহণ করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অপরদিকে ইজারা নেওয়া প্রতিষ্ঠানটি নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন করে। নিয়ম না থাকায় ওই আবেদনে সাড়া দেননি রেলওয়ের কর্মকর্তারা। ফলে গত বছর উচ্চ আদালতে রিট মামলা দায়ের করে ইজারাদার প্রতিষ্ঠানটি। ওই মামলার কারণে এখনও আটকে আছে নতুন করে টেন্ডার আহ্বানের মাধ্যমে ইজারাদার নিয়োগ।রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা (বাণিজ্যিক) মো. মামুন মিয়া বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘মামলার কারণে রেলওয়ে স্টেশনের কার পার্কিংয়ের ইজারাদার নিয়োগ দেওয়া যাচ্ছে না। মামলা শেষ হলে টেন্ডার আহ্বান করা হবে।’তিনি আরও বলেন, ‘শুধু কার পার্কিং নয়, মামলার কারণে রেলওয়ের ক্যাটারিং সার্ভিস থেকে শুরু করে অনেক কিছুরই নতুন টেন্ডার আহ্বান করা যাচ্ছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে রেলওয়ে।খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বছরের পর বছর ধরে দায়ের হওয়া মামলাগুলোর হচ্ছে না নিষ্পত্তি। এমনকি অনেক মামলার বাস্তব কোনও ভিত্তিও নেই। শুধু এসব মামলাকে ‘ফাঁদ’ হিসেবে ব্যবহার করে বছরের পর বছর ঝুলিয়ে রাখা হচ্ছে। এসব মামলা নিষ্পত্তি নিয়ে রেলওয়ে কর্মকর্তাদের তেমন কোনও আগ্রহও দেখা যাচ্ছে না। বছরে ৪০ থেকে ৫০টি মামলা দায়ের হলেও নিষ্পত্তি হচ্ছে মাত্র ৪-৫টি।  এদিকে, পার্কিং স্পেসের মতো মামলার কারণে ঝুলে আছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আওতাধীন ট্রেনে ক্যাটারিং সার্ভিস (খাবার সরবরাহ) পরিচালনায় নতুন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া। রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালে ট্রেনে ক্যাটারিং সার্ভিসের জন্য নতুন করে ঠিকাদার নিয়োগ ও নবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করা হয়। এতে ৪৫টি প্রতিষ্ঠান আবেদন ফরম সংগ্রহ করেছিল। এর মধ্যে আবেদন জমা দেয় ৪২টি প্রতিষ্ঠান। তারা প্রত্যেকে রেলওয়ের নিয়ম অনুযায়ী ৫০ হাজার টাকা (অফেরতযোগ্য) অর্থ জমা দিয়েছিল। যাচাই-বাছাই শেষে ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য যোগ্য হিসেবে বিবেচিত করে সংশ্লিষ্ট কমিটি। তবে আবেদনকারীদের মধ্যে পাঁচটি প্রতিষ্ঠান বাদ পড়ে। ওই পাঁচ প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একটি হাইকোর্টে রিট মামলা দায়ের করে। মামলাটি এখনও চলমান আছে। মামলা শেষ না হওয়ার কারণে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনায় নতুন ঠিকাদার নিয়োগে টেন্ডার আহ্বান করা যাচ্ছে না।রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আইন শাখা সূত্র জানিয়েছে, শুধু রেলওয়ের ক্যাটারিং কিংবা পার্কিং স্পেস নিয়ে মামলা নয়, ভূমি, নিয়োগ জটিলতাসহ নানা কারণে দায়ের হওয়া এক হাজার ৪৫০টি মামলা পরিচালনা করছে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আইন শাখা। সেগুলোর ৮০ শতাংশ মামলাই ভূমি সংক্রান্ত। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ৬৫টি, হাইকোর্ট বিভাগে ৫৪০টি, জজ কোর্টে ৭৭০টি, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে ৭৫টি রয়েছে।প্রতি মাসে ৮ থেকে ১০টি মামলা দায়ের হলেও নিষ্পতি হচ্ছে মাত্র একটি থেকে দুটি। মামলা কম নিষ্পত্তি হওয়া প্রসঙ্গে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের আইন কর্মকর্তা মো. আলআবলেন, ‘রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল আইন শাখায় জনবল সংকট অনেক বেশি। এখানে দুই জন আইন কর্মকর্তার মধ্যে আমি একজন। ৫টি কোর্ট পরিদর্শকের পদ থাকলেও একজনও কর্মরত নেই। স্টেনো টাইপিস্ট, প্রধান সহকারী, অফিস সহকারীর পদও শূন্য রয়েছে। এমনকি যারা মামলা পরিচালনা করবেন, আইনজীবীও রয়েছে কম। এ ছাড়াও একটি মামলা পরিচালনা করতে আইনজীবীকে যে পরিমাণ অর্থ দেওয়া হয় তা অতি নগণ্য।’এ কর্মকর্তা আরও জানান, এখানে মামলার নিষ্পত্তির হার খুবই কম। দশটি মামলা যদি দায়ের হয়, দেখা যায় একটির নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমানে এক হাজার ৪৫০টির মতো মামলা রয়েছে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে