সাবেক ভূমিমন্ত্রীর অর্থপাচার মামলায় ২৩ বস্তা আলামত জব্দ করল দুদক

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ১১:০১ এএম
সাবেক ভূমিমন্ত্রীর অর্থপাচার মামলায় ২৩ বস্তা আলামত জব্দ করল দুদক

সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের বিদেশে অর্জিত সম্পদ ও অর্থপাচারের অভিযোগে নতুন করে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) ভোরে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী শিকলবাহা এলাকার সিকদার বাড়িতে অভিযানে গিয়ে দুদক ২৩ বস্তা আলামত জব্দ করেছে। বস্তাগুলোতে বিদেশে সম্পদ ক্রয়সংক্রান্ত নথি, ভাড়া আদায়ের তথ্য, বিল পরিশোধ এবং আদালতের আদেশসংক্রান্ত কাগজপত্র রয়েছে বলে জানিয়েছে দুদক।

দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মশিউর রহমান জানান, জাবেদের দুই ঘনিষ্ঠ সহযোগী উৎপল পাল ও আব্দুল আজিজকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে এ অভিযান চালানো হয়। এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর দুদকের দল তাদের গ্রেপ্তার করে এবং ১৮ সেপ্টেম্বর আদালত পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে।

তিনি বলেন, “রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি, অনেক ডকুমেন্টস গোপনে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল। এসব নথি জাবেদের স্ত্রী রুকমিলা জামানের গাড়িচালক ইলিয়াসের বাসায় রাখা ছিল। গত শুক্রবার সেখানে অভিযান চালানো হলেও এর আগেই সেগুলো সরিয়ে নেওয়া হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, আমাদের দল পৌঁছানোর আধা ঘণ্টা আগে আলামত সরানো হয়। পরে অন্য একটি ছোট বাসা থেকে আমরা ২৩ বস্তা উদ্ধার করি।”

গ্রেপ্তার হওয়া উৎপল পাল দীর্ঘদিন ধরে জাবেদের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে বিদেশে সম্পদ কেনাবেচার কাজ দেখাশোনা করতেন। তিনি আরামিট গ্রুপের এজিএম হলেও মূলত বিদেশে অর্থপাচারের মাস্টারমাইন্ড হিসেবে কাজ করতেন। তার কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ ও দুটি মোবাইল জব্দ করা হয়েছে, যেগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ তথ্য মিলেছে বলে দুদক জানিয়েছে। অন্যদিকে আব্দুল আজিজ আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম লিমিটেডের এজিএম হিসেবে জাবেদের সম্পত্তি ভাড়া ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন।

এ মামলার সূত্রপাত গত ২৪ জুলাই, যখন দুদক উপ-পরিচালক মশিউর রহমান বাদী হয়ে সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদসহ ৩১ জনকে আসামি করে মামলা করেন। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, জাবেদের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের কর্মচারীদের নামে পাঁচটি নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান গড়ে ইউসিবিএল ব্যাংকের চট্টগ্রাম বন্দর শাখা থেকে গম, ছোলা, হলুদ ও মটর আমদানির নামে ২৫ কোটি টাকার ঋণ অনুমোদন করানো হয়। ব্যাংকের নিজস্ব ‘ক্রেডিট কমিটি’ ১৭টি নেতিবাচক পর্যবেক্ষণ দিলেও পরিচালনা পর্ষদ ২০২০ সালের ৮ মার্চ ঋণ অনুমোদন করে। পরে এসব টাকা ভাগ করে বিভিন্ন হিসাবে স্থানান্তর ও নগদে উত্তোলনের মাধ্যমে পাচার করা হয়।

অভিযোগে আরও বলা হয়, ব্যাংক পরিচালক, ঋণ আবেদনকারী ও অনুমোদনকারীরা সবাই আত্মীয় বা ঘনিষ্ঠ হওয়ায় সমন্বিত চক্রান্তের মাধ্যমে অর্থপাচারের ঘটনা ঘটানো সম্ভব হয়েছে।

দুদক জানিয়েছে, উদ্ধার হওয়া ২৩ বস্তা আলামতের বিস্তারিত যাচাই-বাছাই চলছে। ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য আদালতের অনুমতি চাওয়া হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে