ইসরায়েলি সেনাদের অব্যাহত হামলায় রক্তাক্ত গাজা ভূখণ্ড আবারও পরিণত হয়েছে মৃত্যুপুরীতে। মাত্র একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৯১ ফিলিস্তিনি। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন শিফা হাসপাতালের পরিচালক ডা. মোহাম্মদ আবু সালমিয়ার পরিবারের কয়েকজন সদস্য এবং গাজা সিটি থেকে পালিয়ে আসা চারজন সাধারণ মানুষ।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে দিনভর আকাশ ও স্থলপথে চালানো এ হামলায় বহু বসতবাড়ি, স্কুলে গড়ে ওঠা আশ্রয়কেন্দ্র, বাস্তুচ্যুত মানুষের তাঁবু এবং পালিয়ে আসা লোকজন বহনকারী যানবাহন লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়। শুধু এসব হামলাতেই নিহত হন অন্তত ৭৬ জন।
দিনের শুরুতেই আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক ডা. আবু সালমিয়ার পারিবারিক বাড়ি বোমায় গুঁড়িয়ে যায়। এতে তার ভাই, ভাবি ও তাদের সন্তানসহ অন্তত পাঁচজন নিহত হন। শোকে ভেঙে পড়া আবু সালমিয়া বলেন, “আমি জরুরি বিভাগে দায়িত্বে ছিলাম। হঠাৎ আমার ভাই ও ভাবির মরদেহ সামনে আসে। এখন আর কিছুই অবিশ্বাস্য নয়— প্রিয়জন হয়তো শহীদ হয়ে যাচ্ছে, নয়তো আহত হয়ে আসছে।”
ইসরায়েলি বাহিনী দাবি করছে, তারা গাজা সিটি দখলে নিয়ে দক্ষিণে ‘কনসেন্ট্রেশন জোনে’ মানুষ ঠেলে দিতে অভিযানে নেমেছে। কিন্তু বাস্তবে সাধারণ মানুষের উপরই এই হামলা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। শহরের নাসর এলাকায় একটি ট্রাকে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় নিহত হন অন্তত চারজন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাস্তায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা রক্তাক্ত মরদেহ যেন ভয়াবহ গণহত্যার চিত্র আঁকছিল।
হামাস একে চিকিৎসকদের গাজা ছাড়তে বাধ্য করার জন্য “রক্তাক্ত সন্ত্রাসী বার্তা” বলে আখ্যা দিয়েছে। সংগঠনটি জানিয়েছে, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ১ হাজার ৭০০ জন স্বাস্থ্যকর্মীকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী এবং আটক করেছে আরও ৪০০ জনকে।
গাজায় অবস্থানরত সাংবাদিক হিন্দ খুদারি জানান, হাজারো মানুষ অবিরাম বোমাবর্ষণ, কামান ও ড্রোন হামলা থেকে বাঁচতে মরিয়া হয়ে পালাচ্ছেন। তার ভাষায়, “ইসরায়েল বিস্ফোরকভর্তি রোবটও ব্যবহার করছে, যা পুরো এলাকা ধ্বংস করে দিচ্ছে। প্রতিবার বিস্ফোরণে মনে হচ্ছে ভূমিকম্প হচ্ছে।”
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, আগস্ট থেকে শুরু হওয়া সামরিক অভিযানে গাজার অন্তত সাড়ে চার লাখ মানুষ ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে বাধ্য হয়েছেন। এর আগে এই অঞ্চলে বসবাস করতেন প্রায় ১০ লাখ মানুষ। শুধু গত দুই সপ্তাহেই ধ্বংস করা হয়েছে অন্তত ২০টি বহুতল ভবন। তবে পালিয়ে আসা মানুষ এখন মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন। পানির অভাব, বিদ্যুৎহীনতা, চিকিৎসার সংকট আর মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় তারা রাস্তায় বা খোলা আকাশের নিচেই আশ্রয় নিচ্ছেন।