মেহেরপুরের গাংনীতে

ঘুষ না দেয়ায় কর্মচারীকে স্কুল থেকে বের করে দিলেন প্রধান শিক্ষক

এফএনএস (মোঃ আলী হোসেন: গাংনী, মেহেরপুর) :
| আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:৩৯ পিএম | প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০১:৩৮ পিএম
ঘুষ না দেয়ায় কর্মচারীকে স্কুল থেকে বের করে দিলেন প্রধান শিক্ষক

দাবিকৃত ঘুষের ৫ লাখ টাকা না দেওয়ায় মেহেরপুরের গাংনী সরকারী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক হাসানুজ্জামানকে বিদ্যালয়ে বের করে দিয়েছে প্রধান শিক্ষক আশরাফুজ্জামান লালু মাষ্টার। বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বিদ্যালয়ে গেলে তার কাছে টাকা চায় টাকা দিয়ে অপারগতা প্রকাশ করলে তাকে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেয়া হয়। ইতোপূর্বে গাংনী সরকারী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুজ্জামান লালু মাষ্টারের বিরুদ্ধে নিয়োগ বানিজ্য ও গাছ কেটে বিক্রি সহ নানা অভিযোগ প্রমানিত হলেও তার বড় ভাই গাংনী পৌরসভার তৎকালিন মেয়র আওয়ামীলীগ নেতা আহমেদ আলীর ভয়ে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে আওয়ামীলীগের নাম ভাঙ্গিয়ে দিনের পর দিন লুটপাট করলেও কেউ মুখ খুলতে সাহস পাইনি। 

গাংনী সরকারী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অফিস সহায়ক হাসানুজ্জামান অভিযোগ করে বলেন,২০১৫ সালের ১২ জুলাই বিদ্যালয়ে অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ পান। নিয়োগের সময় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুজ্জামান তার কাছ থেকে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন। পরবর্তীতে ২০২৩ সালের ১৮ ডিসেম্বর হাসানুজ্জামানের চাকরি জাতীয়করণ হয়। ইতোপূর্বে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা দেয়া হলেও নতুন করে আবার ৫ লাখ টাকা দাবি করে। টাকা দিতে না চাইলে বিভিন্ন সময়ে অপমান,অপদস্ত করেন। তার হাত থেকে রক্ষা পেতে এরিয়া বিল হলে তখন কিছু টাকা দিতে চাইলে তিনি একটি ফাকা ব্যাংক চেক জোর পূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেন। 

বৃহস্পতিবার(১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে বিদ্যালয়ে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে গেলে প্রধান শিক্ষক আমাকে স্বাক্ষর করতে দেননি। পরে তিনি একটি চুক্তিনামা লিখে আনেন। সেই চুক্তিতে বলা হয়, এই বিদ্যালয়ে চাকরি করতে হলে জাতীয়করণের জন্য ব্যয় বাবদ আমাকে আরও ৫ লাখ টাকা দিতে হবে। টাকা দিতে অস্বীকার করলে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেন। তিনি আরও জানান, বিষয়টি তিনি তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেনকে মৌখিকভাবে অবগত করেছেন।

বিধিবর্হিভুত ভাবে ১৩ শিক্ষক কর্মচারী নিয়োগ ও বিদ্যালয় প্রাঙ্গনের গাছ নিধনের বিষয়টি প্রমানিত হওয়ায় ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক শাখা-২) দূর্গারানী শিকদার স্বাক্ষরিত পত্রে ৭ দিনের মধ্যে কারন দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয়। কিন্তু তার ভাই গাংনীর সাবেক মেয়র আহমেদ আলীর রাজনৈতিক প্রভাব ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে পার পেয়ে যান। এরপর থেকে বেপোরোয়া হয়ে উঠেন গাংনী সরকারী মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আশরাফুজ্জামান লালু মাষ্টার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গাংনী পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষক বলেন, প্রধান শিক্ষক আশরাফুজ্জামান দীর্ঘদিন ধরে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি করে আসছেন। বিদ্যালয় জাতীয়করণে প্রায় প্রতিটা শিক্ষক ও কর্মচারীর কাছ থেকে লাখ টাকা করে ঘুষ নিয়েছেন। টাকা না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। 

এছাড়া গত এপ্রিল/মে মাসে সরকারি ফান্ড থেকে ভুয়া বিল-ভাউচারে প্রায় ৪ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি শিক্ষক কর্মচারী ও স্থানীয়দের। 

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুজ্জামান লালু মাষ্টারের ব্যবহৃত (শেষ দুটি অক্ষর ১৬) নম্বরে রোববার সকাল ১০ টার দিকে একাধিকবার কল দেয়া হলে তিনি রিসিভ করেনি।

এদিকে প্রধান শিক্ষক মো. আশরাফুজ্জামান লালু মাষ্টারের নিয়োগ বানিজ্য,ভুয়া বিল ভাউসার,গাছ কেটে বিক্রি সহ নানা অনিয়ম দূর্নীতি খতিয়ে দেখে দুদকের প্রতি আহবান জানিয়েছেন স্থানীয়রা। 

গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘুষ না দেওয়ায় অফিস সহায়ককে বিদ্যালয়ে প্রবেশে বাধা দেওয়ার বিষয়ে আমি অবগত রয়েছি। হাসানুজ্জামানকে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আপনার জেলার সংবাদ পড়তে