রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে টানা আন্দোলনের মুখে অবশেষে কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানানো হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, স্থগিত নয়, তারা চূড়ান্তভাবে বাতিলের ঘোষণা চান। দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন তারা। গত বৃহস্পতিবার সন্ধার পর থেকে পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন শুক্রবার প্রতিবাদ মিছিল শেষে বিকেল থেকে প্রশাসন ভবনের সামনে অমর অনশণে বসেন শিক্ষার্থীরা। পোষ্য কোটার ইস্যুতে শনিবার বিকেল থেকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়। পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বিকেল ৩টার দিকে সহউপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মোহাম্মদ মাঈন উদ্দীন প্রশাসনিক ভবন থেকে বের হলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তার গাড়ি আটকে দেন। পরিস্থিতির কারণে তিনি হেঁটে বাসভবনের দিকে রওনা দিলে শিক্ষার্থীরা তার বাসার মূল ফটকে তালা দিয়ে তাকে বাধা দেন। পরে তিনি জুবেরী ভবনের আশ্রয় নেন। তার সঙ্গে ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান। বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সহউপাচার্যসহ বেশ কয়েকজন শিক্ষক ও কর্মকর্তা জুবেরী ভবনে অবরুদ্ধ অবস্থায় ছিলেন। প্রায় সাত ঘণ্টা পর রাত সোয়া ১১টার দিকে আন্দোলনকারীরা অবরোধ তুলে নেন। ফলে সহউপাচার্য ও অন্যরা মুক্ত হন। অবস্থানের এই নাটকীয় পালাবদলের মধ্যেই রাত পৌনে ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরাজমান অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে প্রাতিষ্ঠানিক সুবিধা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কার্যক্রম স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) একটি জরুরি সিন্ডিকেট সভা আহ্বান করা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট নন। তারা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, পোষ্য কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। রাত দেড়টার সময়ও তারা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, পোষ্য কোটা বৈষম্যমূলক। এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে মেধার বিপরীতে একটি অনৈতিক বিশেষ সুবিধা তৈরি করছে। এদিকে, শিক্ষক-প্রশাসনের কেউ কেউ এই আন্দোলন ঘিরে শিক্ষার্থীদের কঠোর সমালোচনা করেছেন। রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি অধ্যাপক আবদুল আলিম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, সহ-উপাচার্যসহ শিক্ষকদের জিম্মি করে রাখা এবং লাঞ্ছিত করার ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। তিনি রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন। অন্যদিকে, উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ্ হাসান নকীব রাত সাড়ে ১১টার দিকে সাংবাদিকদের বলেন, আমরা এখন পর্যন্ত ধৈর্যের পরিচয় দিয়ে চলেছি। কিন্তু এভাবে কাউকে জিম্মি করে রেখে কখনও কোনো সিদ্ধান্ত হতে পারে না। আজ শিক্ষার্থীরা যা করেছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি আরও বলেন, রাকসু নির্বাচন হবে কি না, তা শিক্ষার্থীদের আচরণের ওপর নির্ভর করবে। তবে আমি রাকসু নির্বাচন নিয়ে খুবই সিরিয়াস। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ভিড় আরও বাড়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে। ‘কোটা বাতিল করো’, ‘ভর্তিতে বৈষম্য চলবে না’, ‘ছাড় দিব না’—এমন নানা স্লোগানে ক্যাম্পাস মুখর হয়ে ওঠে। ছাত্রীদের অংশগ্রহণও ছিল চোখে পড়ার মতো। শিক্ষার্থীরা বলেন, স্থগিত নয়, পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিল করতে হবে। যতক্ষণ না সেটি হয়, আমরা এখানেই থাকব। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান আপাতত নমনীয় থাকলেও, চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য রোববারের সিন্ডিকেট সভা-ই এখন সবার দৃষ্টি কেন্দ্রে। শিক্ষার্থীরা পরিষ্কার করে জানিয়েছেন, তাদের আন্দোলন কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে নয়, এটি মেধাভিত্তিক ভর্তির দাবিতে একটি ন্যায়সঙ্গত প্রতিরোধ। উল্লেখ্য, কিছুদিন আগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আবারও পোষ্য কোটা চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর থেকেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। তারপর আবারও আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবি কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।