নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান: উন্নয়ন পরিকল্পনার শর্ত

এফএনএস | প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫, ০৭:৩৭ পিএম
নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান: উন্নয়ন পরিকল্পনার শর্ত

কোনো দেশের উন্নয়ন কৌশল নির্ধারণে সঠিক ও নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান অপরিহার্য। অর্থনীতি থেকে শুরু করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, কর্মসংস্থান-সব ক্ষেত্রেই নীতিনির্ধারকেরা যে সিদ্ধান্ত নেন, তার ভিত্তি হলো তথ্য। তাই তথ্য যদি প্রশ্নবিদ্ধ হয়, তবে পুরো নীতি প্রণয়ন প্রক্রিয়াই দুর্বল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ প্রশ্ন বহুবার উঠেছে-বিবিএস প্রকাশিত তথ্য কতটা নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য? এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ ব্যুরো অব স্ট্যাটিস্টিকস (বিবিএস) সংস্কারের জন্য গঠিত স্বাধীন টাস্কফোর্স সম্প্রতি যে প্রস্তাব দিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী ও সাহসী উদ্যোগ। টাস্কফোর্স সুপারিশ করেছে, প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে “পরিসংখ্যান বাংলাদেশ”(স্ট্যাটবিডি) করা হবে। এর প্রধানকে দেওয়া হবে “চিফ স্ট্যাটিসটিশিয়ান”মর্যাদা, যা হবে একটি বিশেষ স্কেলের পদ। পাশাপাশি সাত সদস্যবিশিষ্ট একটি স্বশাসিত কাউন্সিল-“ট্রাস্ট অ্যান্ড ট্রান্সপারেন্সি কাউন্সিল অব স্ট্যাটিস্টিকস”-গঠনের প্রস্তাব এসেছে, যা প্রাতিষ্ঠানিক তত্ত্বাবধান ও নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ হলো, ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান আইন সংশোধন করে এ প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া। কারণ, তথ্য সংগ্রহ ও প্রকাশের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বা প্রশাসনিক প্রভাব থাকলে আস্থা ক্ষুণ্ন হয়। আন্তর্জাতিক মহলেও বাংলাদেশের পরিসংখ্যান নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই আইনি সুরক্ষা দিয়ে তথ্যের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এখন জরুরি। সংগঠনগত দুর্বলতা কাটাতে আটটি উইং থেকে ১৬টি উইংয়ে সম্প্রসারণ, উপজেলা পর্যায়ে নতুন ৪৩৭টি পদ সৃষ্টির প্রস্তাব এসেছে। এতে মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ আরও শক্তিশালী হবে। পাশাপাশি দীর্ঘদিনের ক্যাডার ও নন-ক্যাডার দ্বন্দ্ব নিরসনে এনক্যাডারমেন্ট প্রক্রিয়ার মাধ্যমে একটি একক ও পেশাদার ক্যারিয়ার কাঠামো তৈরির সুপারিশ করা হয়েছে। প্রশ্ন হলো-এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়িত হবে তো? অতীতে একাধিকবার বিবিএসকে শক্তিশালী করার কথা উঠলেও কাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। কিন্তু এখন আর সময় নষ্ট করার সুযোগ নেই। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) অর্জন, বৈশ্বিক মানদণ্ডে অগ্রগতি এবং দেশের অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা-সব ক্ষেত্রেই নির্ভরযোগ্য পরিসংখ্যান অপরিহার্য। পরিকল্পনা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ যথার্থই বলেছেন, এসব প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশের পরিসংখ্যান ব্যবস্থায় যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। আস্থা বাড়বে অভ্যন্তরীণভাবে, একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক মহলেও বাংলাদেশের তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হবে। অতএব, সরকারের উচিত এই সংস্কার প্রস্তাবগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া। শুধু নাম পরিবর্তন বা কাঠামোগত রদবদল নয়, প্রকৃত স্বাধীনতা ও পেশাদারিত্বই হতে হবে মূল লক্ষ্য। কারণ, নির্ভরযোগ্য তথ্য ছাড়া উন্নয়ন কৌশল কখনো সফল হতে পারে না।