চট্টগ্রাম বন্দরে নিলামে গ্রহণযোগ্য দর না পাওয়ায় সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় আনা ৩০টি গাড়ি সরকারের মালিকানায় হস্তান্তর করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম কাস্টমসের সহকারী কমিশনার (প্রিভেন্টিভ) কবির আহমদ সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
চট্টগ্রাম বন্দরে গত শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক কর্মশালায় এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তিনি বলেন, গাড়িগুলো সরকারের পরিবহন পুলে সংযুক্ত হবে এবং সরকারের যেসব কর্মকর্তা বা বিভাগের জন্য ব্যবহার প্রয়োজন, তারা এগুলো ব্যবহার করবেন। নিলামের সময় গাড়িগুলোর দাম অস্বাভাবিকভাবে কম হওয়ায় সরকারের কোষাগারে যথাযথ রাজস্ব নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সাবেক সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় এই গাড়িগুলো আমদানি করেছিলেন। ওই সময় ৫১ জন সংসদ সদস্য ঋণপত্র খোলেন। আওয়ামী লীগের অধিকাংশ সংসদ সদস্য গাড়িগুলো আমদানির সুযোগ পেয়েছিলেন। তবে ২০২৪ সালের ৬ আগস্ট সংসদ ভেঙে এবং শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল হওয়ায় বেশিরভাগ গাড়ি বন্দর থেকে ছাড় হয়নি।
আমদানি করা মোট ৪২টির মধ্যে ২৪টি গাড়ি গত ফেব্রুয়ারিতে প্রথম দফায় নিলামে তোলা হয়েছিল। আগ্রহী ক্রেতারা গাড়িভেদে সর্বোচ্চ ১ লাখ থেকে ৩ কোটি ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত দর দিয়েছিলেন, যা সংরক্ষিত মূল্য ৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকার তুলনায় অত্যন্ত কম। দশটির জন্য কোনো দরও জমা পড়েনি। এ কারণে এই ৩০টি গাড়ি সরকারকে হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
কাস্টমস জানায়, শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানিকারকদের মধ্যে ছিলেন সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত, মুহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, সানজিদা খানম, মুহাম্মদ শাহজাহান ওমর, সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী, অনুপম শাহজাহান জয়, সাজ্জাদুল হাসান, মো. সাদ্দাম হোসেন পাভেল, তারানা হালিম, নাসের শাহরিয়ার জাহেদী, মো. আবুল কালাম আজাদ, আবদুল মোতালেব, শাম্মী আহমেদ, মোহাম্মদ আব্দুল ওয়াহেদ, রুনু রেজা, মো. তৌহিদুজ্জামান, শাহ সারোয়ার কবীর, একরামুজ্জামান, এস এম আল মামুন, এস এম কামাল হোসেন, মুজিবুর রহমান, মো. আসাদুজ্জামান, নাদিয়া বিনতে আমিন ও আখতারউজ্জামান।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা দেখেছি, নিলামের সময় খুবই অল্প দাম উঠেছে। নিলামের টাকাও সরকারি কোষাগারে যাবে। আবার সরকারকে এসব গাড়ি কিনতে অনেক দাম দিতে হত। তাই জাতীয় স্বার্থের কথা চিন্তা করে এগুলো আমাদের সরকারি পরিবহন পুলে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
সাবেক সংসদ সদস্যদের শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির প্রথা ১৯৮৮ সালের ২৪ মে এরশাদ সরকারের প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে চালু হয়েছিল। এর পরেও তা বহাল ছিল এবং ২০০৯ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত সংসদ সদস্যরা ৫৭৬টি গাড়ি আমদানি করেছেন। তবে রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর নতুন শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিল করা হয়।